শিশুদের সুরক্ষায় এআই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনবে চীন
শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং চ্যাটবটগুলো যাতে আত্মহত্যা বা সহিংসতার মতো ক্ষতিকর পরামর্শ দিতে না পারে, সে লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির ওপর নতুন করে কঠোর নিয়ম প্রস্তাব করেছে চীন। প্রস্তাবিত এই নিয়মের আওতায় এআই নির্মাতাদের নিশ্চিত করতে হবে, তাদের প্রযুক্তি যেন জুয়া খেলাকে উৎসাহিত করার মতো কোনো তথ্য বা বিষয়বস্তু তৈরি না করে। খবর বিবিসি'র।
সম্প্রতি চীনসহ সারা বিশ্বে চ্যাটবটের ব্যবহার নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটেই এই ঘোষণা এসেছে। নিয়মগুলো চূড়ান্ত হলে চীনের সব এআই পণ্য ও পরিষেবার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে। দ্রুত বিকাশমান এই প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়ে চলতি বছর বিশ্বজুড়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলায় চীনের এই উদ্যোগকে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে চীনের সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএসি) খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করে। এতে শিশুদের সুরক্ষায় একাধিক ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—এআই প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিশুদের জন্য আলাদা ব্যক্তিগত সেটিংসের সুবিধা দিতে হবে, ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে এবং কোনো শিশুকে মানসিক সঙ্গ দেওয়ার সেবা (ইমোশনাল কম্প্যানিয়নশিপ) দেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের অভিভাবকদের অনুমতি নিতে হবে।
সিএসি জানিয়েছে, চ্যাটবটে কথোপকথনের সময় যদি আত্মহত্যা বা আত্মঘাতী কোনো প্রসঙ্গ উঠে আসে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে একজন মানুষ (হিউম্যান অপারেটর) সেই আলোচনার দায়িত্ব নেবেন। একই সঙ্গে ওই ব্যবহারকারীর অভিভাবক বা জরুরি যোগাযোগ নম্বরে বিষয়টি দ্রুত জানাতে হবে। এআই সেবা প্রদানকারীদের আরও নিশ্চিত করতে হবে, তাদের প্ল্যাটফর্ম যেন এমন কোনো বিষয় তৈরি বা শেয়ার না করে যা জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, দেশের মর্যাদা ও স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে কিংবা জাতীয় ঐক্য নষ্ট করে।
তবে প্রযুক্তিটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য হলে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রচার এবং বয়স্কদের একাকিত্ব দূর করার মতো কাজে এআই ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছে চীন। একই সঙ্গে এই খসড়া নীতিমালার বিষয়ে সাধারণ মানুষের মতামতও চেয়েছে সিএসি।
চলতি বছর চীনের এআই প্রতিষ্ঠান 'ডিপসিক' বিশ্বজুড়ে অ্যাপ ডাউনলোডের তালিকায় শীর্ষে উঠে আলোচনায় আসে। এ ছাড়া এই মাসে 'জেড ডট এআই' এবং 'মিনিম্যাক্স' নামে দুটি চীনা স্টার্টআপ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবহারকারী সংখ্যা কয়েক কোটি। বর্তমানে অনেক মানুষ একাকিত্ব দূর করা কিংবা থেরাপির বিকল্প হিসেবে এই প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করছেন।
মানুষের আচরণের ওপর এআই-এর প্রভাব নিয়ে গত কয়েক মাসে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। চ্যাটজিপিটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই-এর প্রধান স্যাম অল্টম্যান এ বছর বলেছেন, চ্যাটবটগুলো অন্যের ক্ষতি করতে পারে এমন আলোচনায় কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে—এটি তাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন সমস্যাগুলোর একটি।
গত আগস্টে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি পরিবার ওপেনএআই-এর বিরুদ্ধে মামলা করে। তাদের অভিযোগ, চ্যাটজিপিটি তাদের ১৬ বছর বয়সী ছেলেকে আত্মহত্যার দিকে প্ররোচিত করেছে। এটি ওপেনএআই-এর বিরুদ্ধে 'ভুলবশত মৃত্যুর' অভিযোগে প্রথম আইনি পদক্ষেপ।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওপেনএআই সম্প্রতি 'হেড অফ প্রিপেয়ার্ডনেস' পদে একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এই কর্মকর্তার দায়িত্ব হবে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ও সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এআই মডেলগুলোর ঝুঁকি তদারকি করা। স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন, কাজটি হবে অত্যন্ত চাপের এবং নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে শুরু থেকেই কঠিন সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
