মাসের পর মাস বাবার কাছ থেকে বিয়ের কথা লুকিয়েছিলেন দিব্যা ভারতী
প্রায় ২৮ বছর আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন অকালপ্রয়াত বলিউড তারকা দিব্যা ভারতী। কিন্তু তার স্বল্পকালীন জীবন ও রহস্যময় মৃত্যুকে এখনো কেউ ভুলে উঠতে পারেনি। তাই তো টিভির পর্দায় এখনো তার যে কোনো সিনেমা সকলকে আকৃষ্ট করে। আজ তারই জন্মবার্ষিকী। ২৮ বছর আগে ওই অঘটনটি না-ঘটলে আজ ৪৭-এ পা রাখতেন তিনি।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ দিব্যা ভারতীর। ১৯৯০ সালে তেলেগু ছবি 'বোবিলি রাজা'য় প্রথম দেখা গিয়েছিল তাকে। তার স্বর্গীয় চেহারা, অনলস, প্রগতিশীল উপস্থিতি ক্ষণিকের মধ্যেই তাকে করে তুলেছিল সকলের নয়নের মণি। ভেঙ্কটেশ, চিরঞ্জীবি ও মোহন বাবুর মতো তেলেগু চলচ্চিত্র জগতের প্রখ্যাত অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানেই।
২ বছর পর হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের রুপোলি পর্দায় দেখা যায় তাকে। গোবিন্দের বিপরীতে 'শোলা অওর শাভনাম' সিনেমার হাত ধরে বলিউডে পা রাখেন তিনি। এখানেও তাকে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। স্বল্পকালীন ক্যারিয়ারে সানি দেওল, শাহরুখ খান, অনিল কাপুর, ঋষি কাপুরের মতো প্রথম সারির অভিনেতাদের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিয়েছিলেন দিব্যা।
একাধিক হিট সিনেমা উপহারে দিয়ে থাকলেও, সাজিদ নাডিয়াডওয়ালার সঙ্গে বিয়ের খবর তার সমস্ত হিট সিনেমাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল।
কীভাবে ঘটেছিল? 'বলিউড হাঙ্গামা'কে দেওয়া একটি পুরনো সাক্ষাৎকারে তার মা মীতা জানিয়েছেন, কীভাবে তার বাবা ওম প্রকাশ ভারতী কয়েকমাস পর দিব্যার বিয়ে সম্পর্কে জানতে পারেন।
মীতা জানান, কীভাবে দিব্যা সাজিদ নাডিয়াডওয়ালাকে পছন্দ করতে শুরু করেছিলেন। 'আসলে শোলা অওর শাভনামে'র সেটে প্রথম আলাপ তাদের মধ্যে। সেখানে গোবিন্দের সঙ্গে অন্য একটি সিনেমা সম্পর্কে আলোচনা করতে আসতেন সাজিদ। মীতা বলেন, "গোবিন্দের ডেট পাওয়ার জন্য সাজিদ শোলা অওর শাভনামের সেটে যাতায়াত করতেন। সেখানেই দিব্যার সঙ্গে আলাপ হয় তার। সে দিনই দিব্যা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, 'মা, সাজিদ সম্পর্কে তোমার কী ধারণা?' আমি বলেছিলাম, 'ভালোই লাগে।' কয়েক দিন পর সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, সে সাজিদকে বিয়ে করতে পারে কি না। তখন ওকে বলেছিলাম, 'তোমার বাবাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো।' কিন্তু ওর বাবা এই বিয়ের বিরুদ্ধে ছিলেন। তার নিজস্ব একটি ধারণা ছিল এবং দিব্যার চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধাচারণই করেছিলেন তিনি। ১৮ বছর হওয়ার পরই দিব্যা আমাকে জানায়, সে সাজিদকে বিয়ে করছে এবং সাক্ষী হিসেবে আমাকে চায়। আমি তাকে স্পষ্ট জানিয়েছিলাম, তার বাবাকে না জানালে আমিও সাক্ষী হিসেবে সাক্ষর করতে পারব না।"
বিয়ের পর দিব্যা নিজের মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন, মাঝেমধ্যে সাজিদের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। তার সম্মতি ছাড়াই যে দিব্যা এত বড় পদক্ষেপ করেছেন, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা করতে পারেননি বাবা ওম প্রকাশ ভারতী। কয়েকমাস পর দীপাবলি উপলক্ষে দিব্যার বাড়ি যান সাজিদ এবং সেখানেই নিজের ও দিব্যার বিয়ে সংবাদ জানান তিনি।
দীর্ঘ জীবন ও আনন্দময় বিবাহসম্পর্ক- কোনোটাই ভোগ করে যেতে পারেননি দিব্যা ভারতী। বিয়ের মাত্র ১০ মাস পর তার পাঁচতলা বাড়ির বারান্দা থেকে পড়ে প্রাণ খোয়ান দিব্যা। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর।
ভালোবাসার ডাকে মনের সাতটি সমুদ্র পার করেও সুখে সংসার করার স্বপ্ন তার সঙ্গেই পঞ্চভূতে বিলীন হয়েছিল সেদিন।