২০২০ সালেই আন্তপরিচালনযোগ্য লেনদেন প্ল্যাটফর্ম চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বন্ধ হয় সরকারের চাপে
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালে ব্যাংক টু এমএফএস (মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) -এর মধ্যে একক আন্তপরিচালনযোগ্য লেনদেন ব্যবস্থা চালু করেছিল। কিন্তু, তৎকালীন সরকারের চাপে পরবর্তীতে এই প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ করতে হয়েছিল। যা পাঁচ বছর পরে পুনরায় সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক চালু করেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদ।
আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত 'অর্থনৈতিক সংস্কার সম্মেলন ২০২৫' অনুষ্ঠানে 'ক্যাশলেস ইকোনমি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুসন' শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিগত আওয়ামী সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এনপিএসপি প্ল্যাটফর্মের বিপরীতে 'বিনিময়' প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আসে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইসিটি বিভাগের ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ একাডেমি (আইডিইএ) প্রায় ৬৫ কোটি টাকা খরচে এটি তৈরি করে।
যদিও বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের আমলে বিনিময় প্লাটফর্মটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, "আমরা এনপিএসবি -এর মাধ্যমে আন্তপরিচালনযোগ্য লেনদেন ব্যবস্থা চালুর পরপরই সরকার নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। রাজনৈতিক কারণ ও নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে আমরা অগ্রগতি থামিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। আগের সেশনে আমাদের এক নীতিনির্ধারকও বলেছিলেন—'সেন্ট্রাল ব্যাংকের স্বাধীনতা কেন প্রয়োজন?'—এই বিষয়টি তারই একটি বাস্তব উদাহরণ।"
তিনি বলেন, "এখন আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, তা হচ্ছে একটি 'উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক' মডেল, যেখানে ব্যাংক ও পেমেন্ট সেবা প্রদানকারীরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেবা দেবে, এবং এর ফলে গ্রাহকদের খরচ কমে আসবে।"
বর্তমানে ব্যাংক-টু-ব্যাংক লেনদেনে প্রায় ১ টাকা চার্জ নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু অংশ—যেমন ৮৫ পয়সা—ভিশন বা নেটওয়ার্ক ফি হিসেবে যায়। "আমরা মনে করছি, প্রতিযোগিতা বাড়লে এই চার্জ আরও কমে আসবে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—লেনদেন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা" - আরও বলেন তিনি।
মোহাম্মদ রাশেদ বলেন্ম "গ্রাহক নিজেই ঠিক করবেন তিনি ব্যাংক থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠাবেন, নাকি ওয়ালেটে রাখবেন। আমরা চাই মানুষ তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারে উৎসাহী হোক, কারণ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ইতোমধ্যেই প্রায় ১৪ কোটি।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, "আমাদের দেশে মোট সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাব মিলিয়ে প্রায় ২৪ কোটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন গ্রামীণ ব্যাংক ও অন্যান্য বড় এনজিও—সব মিলিয়ে তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। আমরা আশা করছি, আগামী মাসের মধ্যেই শীর্ষ মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোও আমাদের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে।"
"বর্তমানে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া তুলনামূলক জটিল—অ্যাকাউন্ট নম্বর, নাম ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়। আমরা চাই এটি আরও সহজ হোক, যেন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই এক ক্লিকে লেনদেন করা যায়।"
আমরা আগামী বছরের মধ্যে একক 'বাংলা কিউআর কোড' ব্যবহারের লক্ষ্য আছে জানিয়ে তিনি বলেন, "এর মাধ্যমে প্রতিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ওয়ালেটের জন্য একটি ইউনিক কিউআর কোড ব্যবহার করা হবে। যেকোনো ব্যাংক ও এমএফএস -এর গ্রাহক এই কিউআর কোড স্ক্যান করলেই টাকা পাঠাতে পারবেন। এটি আমাদের দেশের জন্য এক বিশাল পরিবর্তন আনবে।"
প্রায় ১০ কোটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে 'বাংলা কিউআর কোড' চালু হলে বাংলাদেশের ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম এক নতুন মাত্রা পাবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে বলেও জানান তিনি।
