সীমান্তেজুড়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ; ৫৮ পাকিস্তানী সেনা, দুই শতাধিক তালেবান নিহতের দাবি

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তজুড়ে একাধিক স্থানে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষই পরস্পরের চৌকি দখল ও ধ্বংসের দাবি করছে—যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় সীমান্ত সংঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার রাতে পাকিস্তানের হামলার "প্রতিশোধ" নিতে চালানো আফগান বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে অন্তত ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। এর দুই দিন আগে কাবুল ও পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর হামলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সংঘর্ষে তাদের ২৩ জন সেনা নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন। একই সঙ্গে তারা দাবি করেছে, ২০০-রও বেশি তালেবান ও সংশ্লিষ্ট যোদ্ধা নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ হামলাকে "অযৌক্তিক গুলিবর্ষণ" বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তালেবান সরকার সাম্প্রতিক বোমা হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও ইসলামাবাদ এ অভিযোগ অস্বীকার বা স্বীকার কোনোটিই করেনি।
পাকিস্তানের কূটনৈতিক বার্তা
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, "সন্ত্রাসী ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তালেবান সরকার যেন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়, যারা পাকিস্তান-আফগান সম্পর্ক নষ্ট করতে চায়।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা কোনোভাবেই আফগান জনগণের বিরুদ্ধে নয়। পাকিস্তান নিজের ভূখণ্ড, সার্বভৌমত্ব ও জনগণকে রক্ষায় সব পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।"
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দাবি
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা জানিয়েছে, "বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য ও ক্ষয়ক্ষতির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সীমান্তজুড়ে ২০০-র বেশি তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং তাদের পোস্ট, ক্যাম্প, সদরদপ্তর ও সাপোর্ট নেটওয়ার্কে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।"
দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন
দীর্ঘ সময় ধরে পাকিস্তানকে তালেবানের অন্যতম মদদদাতা হিসেবে দেখা হতো। ১৯৯৬ সালে তালেবানের প্রথম ক্ষমতায় ওঠার পর ইসলামাবাদ তাদের আশ্রয়, অর্থায়ন ও কূটনৈতিক সহায়তা দেয়।
তবে ৯/১১ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে অভিযানের সময় বহু তালেবান নেতা পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। এ সময়ই পাকিস্তান তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি) গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে, যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান শুরু করে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী টিটিপি দমনে একাধিক অভিযান চালিয়ে অনেক নেতাকে আফগানিস্তানে ঠেলে দেয়। ২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তান আশা করেছিল, তারা টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণে আনবে—কিন্তু হামলার সংখ্যা বরং বেড়েছে।
'গেরিলা যুদ্ধ, প্রচলিত যুদ্ধ নয়'
পাকিস্তানের সাবেক আফগান রাষ্ট্রদূত আসিফ দুররানি বলেছেন, এ সংঘাত বড় আকার ধারণের সম্ভাবনা কম। "আফগানিস্তানের প্রচলিত সেনা সক্ষমতা পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনীয় নয়," তিনি বলেন।
"গেরিলা যুদ্ধ আর প্রচলিত যুদ্ধ এক নয়—এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান অনেক এগিয়ে।"
দুররানি মনে করেন, মূল টানাপোড়েনের কারণ টিটিপির উপস্থিতি, যা কাবুল স্বীকার করতে নারাজ। "যতদিন এ গোষ্ঠী থাকবে, সীমান্তে উত্তেজনা থেকেই যাবে," তিনি সতর্ক করেন।
তিনি আরও বলেন, "মস্কো ফরম্যাট বৈঠকেও যৌথ বিবৃতিতে কাবুলকে নিজেদের ভেতরের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু আফগান তালেবান এখনো বাস্তবতা অস্বীকার করছে, যেন সবকিছু স্বাভাবিক।"