গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরায়েল

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। এরমধ্যে দিয়ে অবশেষে মধ্যপ্রাচ্যে দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজা নিয়ে প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে—যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তিতে—ইসরায়েল ও হামাস সম্মত হয়। ট্রাম্প নিজেই এ তথ্য জানান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে করা এক পোস্টে ট্রাম্প জানিয়েছেন, 'ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সই করেছে।'
তিনি আরও লিখেছেন, 'এর মানে হলো, সব বন্দি খুব শিগগিরই মুক্তি পাবে এবং ইসরায়েল তাদের সেনা নির্ধারিত সীমান্তরেখা পর্যন্ত প্রত্যাহার করবে। এটি হবে এক শক্তিশালী, দীর্ঘস্থায়ী ও স্থায়ী শান্তির প্রথম পদক্ষেপ। সব পক্ষের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা হবে।'
ট্রাম্প আরও বলেন, 'এটি আরব ও মুসলিম বিশ্ব, ইসরায়েল, আশপাশের সব দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় দিন। আমরা কাতার, মিশর ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীদের ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করে এই ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন ঘটনাকে সম্ভব করেছেন।'
গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর দ্বিতীয় বার্ষিকীর ঠিক একদিন পর মিশরে অনুষ্ঠিত পরোক্ষ আলোচনায় ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি কাঠামোর প্রাথমিক ধাপে এই ঐতিহাসিক সমঝোতা হয়।
চুক্তিটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে দুই পক্ষই আগের যেকোনো প্রচেষ্টার চেয়ে আরও কাছাকাছি আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এবং এই চুক্তিই মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রতি ঘটতে থাকা আঞ্চলিক সংঘাতে থামাবে—যেখানে ইরান, ইয়েমেন ও লেবাননের মতো দেশগুলোও গাজা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্নভাবে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে, চুক্তির প্রথম ধাপে সম্মত হওয়ার বিষয়টি বিবৃতি দিয়ে নিশ্চিত করেছে হামাস ও ইসরায়েল উভয়পক্ষই।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চুক্তি সইয়ের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহু টেলিফোনে কথা বলেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, 'দুজনের মধ্যে অত্যন্ত আন্তরিক ও আবেগঘন আলোচনা হয়েছে। বন্দি মুক্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য তারা একে অপরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।'
অন্যদিকে হামাস বিবৃতে জানিয়েছে, '(মিশরের) শারম আল-শেখে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে হামাস ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দায়িত্বশীল ও গভীর আলোচনার পর আমরা আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যার অবসান এবং দখলদার বাহিনীর গাজা উপত্যকা থেকে প্রত্যাহারের লক্ষ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছি।'
বিবৃতি বলা হয়, 'ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্ট (হামাস) ঘোষণা করছে যে, এই চুক্তির আওতায় গাজায় যুদ্ধের সমাপ্তি, দখলদার বাহিনী প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং বন্দি বিনিময়ের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।'
কাতার, মিশর ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকার প্রশংসা করে হামাস বিবৃতিতে আরও লিখেছে, 'আমরা আমাদের মধ্যস্থতাকারী ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলোর প্রচেষ্টাকে গভীরভাবে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করছি। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকেও আমরা মূল্যায়ন করছি, যিনি যুদ্ধের স্থায়ী অবসান ও গাজা থেকে দখলদার বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।'
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তারিখে হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা গাজার সীমানা পেরিয়ে ইসরায়েলি বসতি ও সামরিক ঘাঁটিতে আকস্মিক হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ওই ঘটনায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৭০০–এর বেশি ছিলেন সাধারণ নাগরিক। এছাড়া ২৫১ জনকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের পাল্টা সামরিক অভিযানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ক্ষুদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল গাজা। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সেখানে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের ৪৬৬ জন সেনা নিহত হয়েছেন এবং ২ হাজার ৯৫১ জন আহত হয়েছেন।