ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ছাড়া গাজা যুদ্ধবিরতি অসম্পূর্ণ: কাতারের প্রধানমন্ত্রী
গাজায় দুই মাস ধরে কার্যকর থাকা যুদ্ধবিরতি তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে সরে যাবে—ওয়াশিংটন ও জাতিসংঘ সমর্থিত শান্তি-পরিকল্পনার প্রতি ইঙ্গিত করে এমন মন্তব্য করেছেন গাজা চুক্তিতে অন্যতম প্রধান মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি।
আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দোহা ফোরামে তিনি বলেন, "আমরা এখন এক সংকটময় মুহূর্তে… পূর্ণ যুদ্ধবিরতি তখনই সম্ভব, যখন ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হবে এবং সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।"
কাতারের রাজধানী দোহায় প্রতিবছর কূটনৈতিক এ ফোরামের আয়োজন করা হয়। যেখানে আরব দেশসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিকরা অংশ নিয়ে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্র এবং মিসরের পাশাপাশি কাতারও গাজায় দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ভেঙে ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে, যা ইসরায়েল–হামাসের মধ্যে চলমান দুই বছরের পূর্ণমাত্রার সংঘাতের ব্যাপকতা বন্ধ করেছে। যদিও থেকে থেকেই গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। এই অবস্থায়, শান্তি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আর ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্যও পর্যাপ্ত সহায়তা পৌঁছানো যাচ্ছে না।
এরমধ্যে গাজা শান্তিচুক্তির দ্বিতীয় ধাপ এখনো শুরু হয়নি। দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলি বাহিনীর ধীরে ধীরে গাজায় তাদের অবস্থান ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এরপর একটি অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ গাজার শাসনভার নেবে এবং আইএসএফ নামে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন করে গাজায় স্থিতিশীলতা আনতে মোতায়েন করা হবে।
তবে আরব ও মুসলিম দেশগুলো এই বাহিনীতে অংশ নিতে অনিচ্ছুক; কারণ বাহিনীটিকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াতে হতে পারে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানও দোহা ফোরামে বলেন, আইএসএফ গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে এর নেতৃত্ব কাঠামো ও কোন কোন দেশ এতে অংশ নেবে—এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের এখনো রয়েই গেছে।
ফিদানের মতে, আইএসএফের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত, "ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলিদের থেকে আলাদা করা।" তিনি বলেন, "এটি হওয়া উচিত আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। এরপর বাকি বিষয়গুলো মোকাবিলা করা যাবে।"
হামাসের নিরস্ত্রীকরণ পরিকল্পনা এখনো প্রত্যাখ্যাত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থাপিত ২০ দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার শাসক ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে এবং অস্ত্র জমা দিলে এর সদস্যদের গাজা ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে হামাস বারবার এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে।
তুরস্ক আইএসএফে অংশগ্রহণের আগ্রহ দেখালেও—ইসরায়েল এটিকে বিরূপভাবে দেখছে, কারণ আঙ্কারাকে তারা হামাসের 'ঘনিষ্ঠ মিত্র' হিসেবে বিবেচনা করে।
হাকান ফিদান বলেন, "এই যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র কার্যকর উপায় হলো আন্তরিকতার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় এগিয়ে যাওয়া।"
'টেকসই সমাধান' চায় কাতার
কাতারের প্রধানমন্ত্রী জানান, যুদ্ধবিরতির গ্যারান্টর দেশগুলো—তুরস্ক, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতার—চুক্তির পরবর্তী ধাপ কার্যকর করতে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এই পরবর্তী ধাপটিও আমাদের দৃষ্টিতে সাময়িক।
তিনি বলেন, "গত দুই বছরের ঘটনাপ্রবাহের সমাধান করলেই হবে না—আমরা এমন এক টেকসই সমাধান চাই, যা উভয় পক্ষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।"
মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলাত্তি দোহা ফোরামের ফাঁকে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কায়রো জানায়, বৈঠকে গাজার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় এবং উভয় পক্ষ শার্ম এল-শেখে স্বাক্ষরিত অক্টোবরের শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে অব্যাহত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
মিসর ইতোমধ্যে গাজায় পাঠানোর জন্য পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য প্রশিক্ষণের ঘোষণা দিয়েছে এবং আইএসএফ বাহিনীর সম্ভাব্য অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে বিবেচিত হচ্ছে।
