২১ লাখ মৃত ভোটার তালিকা থেকে বাদ; 'আগে এসব মৃত ব্যক্তির অনেকে ভোট দিয়ে যেত', বললেন সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে প্রায় ২১ লাখ মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। অতীতে এসব মৃত ব্যক্তির নামেও ভোট দেওয়া হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আয়োজিত এক সংলাপে সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, 'নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করেছি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছি। ইতিমধ্যে প্রায় ২১ লাখ মৃত ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছি। এই মৃত ভোটার যে নামেই হোক, অনেকে ভোট দিয়ে যেত। আমি প্রিন্ট মিডিয়ায় এমন ক্যাপশন দেখেছি, "কবরবাসী ভোটার"।'
সিইসি জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় ২১ লাখের বেশি মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে এবং বাদ পড়া ৪৩ লাখেরও বেশি ভোটারকে তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে নারী-পুরুষ ভোটারের ব্যবধান ৩০ লাখ থেকে কমে ১৮ লাখে নেমেছে।
এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য আইটি-সমর্থিত পোস্টাল ব্যালট ভোটিং ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ভোটের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তা এবং আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদেরও পোস্টাল ব্যালটের আওতায় এনে ভোট দেওয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সিইসি জানান, ইসির একার পক্ষে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা সম্ভব নয়। এর জন্য গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, ভোটার এবং জনগণসহ সবার সহায়তা লাগবে। তিনি অপতথ্য ও মিথ্যা তথ্য রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
নভেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার অনেকগুলো কাজ করেছি। বিশেষ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ হয়েছে। নারীরা ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল, তাদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছি।'
স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যয় ব্যক্ত করে সিইসি বলেন, 'আমাদের লুকানোর কিছু নেই। দেশ ও বিশ্বকে দেখাতে চাই স্বচ্ছ নির্বাচন। স্বচ্ছভাবে আয়নার মতো পরিষ্কার করে নির্বাচনটা করতে চাই। আমাদের সাফ কথা, গণমাধ্যমের সহযোগিতা লাগবে। স্বচ্ছ পদ্ধতিতে কাজটা সারতে চাই। ভোটারদের জন্য কিছুদিনের মধ্যে সচেতনতা প্রোগ্রাম শুরু করব।'
ইসি জানায়, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার শেষ পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসা হবে। সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া এই সংলাপ প্রক্রিয়া প্রায় দেড় মাস ধরে চলবে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে ইসি তাদের 'সংলাপ পর্ব' শুরু করে।
সাংবিধানিক এ সংস্থাটি রোজার আগে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে চায়। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, সকালে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে বিভিন্ন টেলিভিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ ও সিইও শফিক আহমেদ, বৈশাখী টিভির বার্তা প্রধান জিয়াউল কবীর সুমন, যমুনা টিভির তৌহিদুল ইসলাম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির মোস্তফা আকমল, গ্লোবাল টিভির ফেরদৌস মামুন, চ্যানেল আই-এর জাহিদ নেওয়াজ খান, ডিবিসি নিউজের লোটন একরাম, এটিএন নিউজের শহীদুল আজম, গ্রিন টিভির মাহমুদ হাসান, জিটিভির গাউছুল আজম বিপু, দীপ্ত টিভির এসএম আকাশ, সময় টিভির জহুরুল ইসলাম জনি, নিউজ টোয়েন্টিফোরের শরিফুল ইসলাম খান, মাছরাঙা টিভির নিয়াজ মোর্শেদ, আনন্দ টিভির জয়নাল আবেদীন, এটিএন বাংলার ইকরামুল হক সায়েম এবং বিটিভির মনির ইসলাম উল্লেখযোগ্য।