সদর দপ্তর নির্মাণের ৮ বছরের মাথায় আবার নতুন ভবনের জন্য জমি চাইছে বিএসইসি

আট বছর আগে আগারগাঁওয়ে নিজস্ব দশতলা ভবন নির্মাণ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই ভবন নির্মাণের পর এবার আরও একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ভবন নির্মাণে পুর্বাচলে তিন একর জমি বরাদ্দ চেয়েছে পুঁজিবাজারের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা শের-ই-বাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকায় কোনো জায়গা খালি না থাকায় রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে জমির জন্য আবেদন করা হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া চিঠিতে বর্তমান অবকাঠামোয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম, উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণে স্থান সংকুলান না হওয়া, কর্মকর্তাদের বসতে দিতে না পারা ও গাড়ি পার্কিংয়ের সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
বর্তমানে বিএসইসিতে ৩৬৯ জন অনুমোদিত কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, শিগগিরই আরও ৩০১টি নতুন পদ অনুমোদিত হলে এই সংকট আরও গভীর হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বর্তমানে কমিশনের যে ভবন রয়েছে, তাতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। অনেক অফিসাররা বসার ডেস্কও পাচ্ছে না। ফলে নতুন ভবন নির্মাণে জমি বরাদ্দ কমিশনের দীর্ঘদিনের চাওয়া।'
'কমিশনের বর্তমান কাঠামো যে জনবল রয়েছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদারে তা আরও বাড়াতে সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সত্যিকারের একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে গড়ে উঠতে কমিশনের আরও জনবল দরকার', যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'নতুন জনবল অনুমোদন পেলে বর্তমান ভবনে স্থান সংকুলান হবে না। এছাড়াও কমিশনের নিজস্ব একাডেমী ও আগামী আরও পণ্য বৈচিত্রায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে কমিশনের আরও জায়গা প্রয়োজন।'
১৯৯৩ সালে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বিএসইসির মূল কাজ হলো পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কমিশন মতিঝিলের জীবন বীমা টাওয়ার থেকে আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসের পাশে ৩৩ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত নিজস্ব দশতলা ভবনে স্থানান্তরিত হয়।
অর্থ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বিএসইসি বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য তারা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে পরামর্শক নিয়োগের মতো জরুরি বিষয়ও রয়েছে। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে, জিডিপি-বাজার মূলধনের অনুপাত আঞ্চলিক মানে উন্নীত করতে এবং টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে কমিশন।
বর্তমানে চলমান উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে: বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন চালু, এসএমই অর্থায়নের সুযোগ সম্প্রসারণ, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট চালু, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠন এবং উদ্ভাবনী পুঁজিবাজার শিক্ষা কার্যক্রম।
চিঠিতে বলা হয়, দেশের পুঁজিবাজারের পরিসর ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ক্রমবর্ধমান পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের নিমিত্ত কমিশনের স্থায়ী জনবল কাঠামো বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ভবিষ্যতে দেশের পুঁজিবাজার পরিসর বিশেষ করে বন্ড, ডেরিভেটিভস ট্রেড শুরু হলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় অধিক জনবলের প্রয়োজন হবে।
বর্তমান অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান জনবল কাঠামোয় নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ও পুরাতন কর্মচারীদের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উক্ত ভবনটিতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। স্থান অভাবে কমিশন ভবনে বড় পরিসরে সভা-সেমিনার করার জন্য আধুনিক কোনো অডিটোরিয়াম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে বিএসইসি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনস-এর 'এ' ক্যাটাগরির সদস্যপদ লাভ করে। ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সভা-সেমিনার আয়োজন করা যেতে পারে এমন একটি অডিটোরিয়াম কমিশন ভবনে থাকা অত্যাবশ্যক।
চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানের অভাবে দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সীমিত পার্কিংয়ের কারণে কমিশনকে পাশের বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছ থেকে পার্কিং এলাকা ভাড়া নিতে হয়।
বিএসইসি মনে করে, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি নতুন সদর দপ্তর নির্মাণ করা হলে বিনিয়োগকারীদের আরও দক্ষতার সঙ্গে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। তারা আরও উল্লেখ করে, বর্তমান কমিশন ভবনটির কাঠামোগত বা ফ্লোর স্পেস বৃদ্ধি করার কোনো সুযোগ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক সেবা প্রদানে কাঠামোগত অনুকূল পরিবেশ অপরিহার্য যা বিনিয়োগকারীদের সেবা প্রদানে অত্যাবশ্যক।