শান্তি পরিকল্পনায় হামাসের প্রতিক্রিয়াকে ট্রাম্প স্বাগত জানানোয় গাজায় তোলপাড়

প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় হামাসের প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামাসের প্রতিক্রিয়াকে ট্রাম্পের স্বাগত জানানো হতবাক করেছে গাজার মানুষকে। খবর বিবিসির।
শত শত ফিলিস্তিনি প্রতিবেদকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট ও মেসেজিং অ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে জানতে চেয়েছেন— 'যুদ্ধ কি শেষ হয়েছে?' বা 'এটা কি স্বপ্ন, নাকি বাস্তব?'
রাতারাতি ঘটনাবলির দ্রুত পরিবর্তন অনেককেই বিভ্রান্ত করে ফেলেছে— এখন কী ঘটবে, তা তারা বুঝে উঠতে পারছেন না।
হামাসের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিটি খুব সতর্কভাবে তৈরি করা হয়েছে— ধারণা করা হচ্ছে, মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় এটি লেখা হয়েছে। ওই বিবৃতিতে শান্তি পরিকল্পনাটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে একটি শর্তসাপেক্ষ 'হ্যাঁ' জানানো হয়েছে।
হামাস ট্রাম্পের প্রস্তাবে দুটি বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। সেগুলো হলো ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির শর্ত ও গাজা শাসনের দায়িত্ব ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের (অরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের) হাতে তুলে দেওয়া।
তবে ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবের বাকি অনেক বিষয়ে তারা স্পষ্ট কোনো জবাব দেয়নি।
অনেক ফিলিস্তিনির মতে, এটি ছিল একটি হিসাব-নিকাশ করে দেওয়া জবাব— যা বলটি আবার ইসরায়েলের কোর্টে ফিরিয়ে দিয়েছে।
বিবৃতিটি প্রকাশের পরপরই ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, তিনি মনে করেন হামাস এখন শান্তির জন্য প্রস্তুত এবং তিনি ইসরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র— কেউ আশা দেখছেন, আবার কেউ গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
কিছু মানুষ আশঙ্কা করছেন, হামাস হয়তো ফাঁদে পা দিয়েছে— ইসরায়েল জিম্মিদের ফেরত নেওয়ার পর আবার যুদ্ধ শুরু করতে পারে।
অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, দুই বছরের সংঘাতের অবসান ঘটাতে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছে।
একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক ইব্রাহিম ফারেস বিবিসিকে বলেন, 'আমি ধৈর্যের পরামর্শ দিচ্ছি।'
তিনি বলেন, 'অতিরিক্ত আশাবাদে ভেসে যাবেন না। বিস্তারিত নিয়ে আরও বেশ কয়েক দফা আলোচনা হবে। আসল সমস্যা লুকিয়ে থাকে খুঁটিনাটিতে।'
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, 'লেবাননের দিকে তাকান— এখনো সেখানে বাস্তুচ্যুত মানুষ আছে, চলছে বিমান হামলাও।'
অন্যদিকে আরেক ফিলিস্তিনি মাহমুদ দাহের ফেসবুকে লিখেছেন, হামাসের এই প্রতিক্রিয়া ছিল অস্বাভাবিকভাবে সরাসরি।
তিনি লিখেছেন, 'এইবার হামাসের উত্তর ছিল "হ্যাঁ"— সাধারণত যেমন সঙ্গে সঙ্গে "কিন্তু" যোগ করে, এবার তা ছিল না।'
ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী বন্দিদের মুক্তিতে হ্যাঁ, যুদ্ধের অবসান ও প্রত্যাহারে হ্যাঁ, ক্ষমতা একটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে হ্যাঁ। "কিন্তু" শব্দগুলো এসেছে পরে। হামাস এমনকি ট্রাম্পের প্রশংসা করে তার অহমকেও সন্তুষ্ট করেছে।'
তবে সবাই যে এতে আশ্বস্ত, তা নয়।
গাজাভিত্তিক কর্মী ও হামাসের দীর্ঘদিনের সমালোচক খলিল আবু শাম্মালা বলেন, এই সিদ্ধান্ত আসলে আন্দোলনে টিকে থাকার কৌশল।
তিনি বলেন, 'তারা এটাকে প্রজ্ঞা বা জনগণের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত বলে আখ্যা দেবে। কিন্তু সত্য হলো, এটি হামাসের ক্ষমতায় টিকে থাকার পদক্ষেপ। আমি তো সন্দেহ করি, বিবৃতিটি হামাস নিজেরা লেখেনি— এটি ছিল অতিমাত্রায় চতুরভাবে লেখা।'
এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনিরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন— অপেক্ষা করছেন, কাগজে লেখা এই কথাগুলো সত্যিই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে কিনা, তা দেখার জন্য।