এশিয়ার দেশগুলোতে বাড়তে পারে যমজ শিশুর জন্ম
ভারতের দক্ষিণের কোদিনহি গ্রামকে স্থানীয়রা ডাকে 'ঈশ্বরের যমজদের গ্রাম'। কেন এখানকার মায়েদের অন্যদের চেয়ে এত বেশি যমজ সন্তান হয়, তা এক রহস্য! তবে খুব শীঘ্রই হয়তো কোদিনহি আর এত ব্যতিক্রমী থাকবে না। নতুন এক গবেষণা বলছে, ভারতসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় যমজ শিশুর জন্মহার বাড়তে চলেছে! আর এই প্রবণতা মা ও শিশুর জন্য গর্ভাবস্থা ও প্রসবকালীন ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
যমজ সন্তান হওয়ার কারণগুলো নিয়ে খুব বেশি তথ্য আমাদের জানা নেই। ১৯৭০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে উর্বরতা চিকিৎসার প্রসারের কারণে বিশ্বজুড়ে যমজ জন্মের হার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল (যদিও কিছু কৌশল এখন কম জনপ্রিয়)। তবে জেনেটিক্স বা বংশগতিরও একটা বড় ভূমিকা আছে: দেখা যায় যমজ হওয়ার প্রবণতা পরিবারে লেগে থাকে।
মায়ের বয়সও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। একটি হিসাব বলছে, একজন ৩৫ বছর বয়সী মায়ের যমজ সন্তান ধারণের সম্ভাবনা ১৮ বছর বয়সী মায়ের চেয়ে চারগুণ বেশি, এমনকি কোনো 'ফার্টিলিটি' চিকিৎসা ছাড়াই!
বর্তমানে, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক এশীয় দেশে যমজ জন্মের হার বেশ কম। কিন্তু একটা বড় পরিবর্তন আসছে: এই অঞ্চলের নারীরা এখন দেরিতে সন্তান নিচ্ছেন। আর এই বয়স বৃদ্ধির সঙ্গেই যমজ জন্মের হার লাফিয়ে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের সুজি লি এবং স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের কিয়েরন বার্কলের অনুমান বলছে, কেবল মায়ের বয়স বৃদ্ধির কারণেই ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতে যমজ জন্মের হার ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে যেতে পারে!
তাদের মডেল অনুযায়ী, ২০১০ সালে প্রতি ১০০০ জন্মে ৭টি যমজ থেকে বেড়ে ২০৫০ সালে তা ১১টি হতে পারে। বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও নেপালেও একই ধরনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা যেতে পারে (চার্ট দেখুন)। আর যদি এই সময়ের মধ্যে 'ফার্টিলিটি' চিকিৎসা আরও সহজলভ্য হয়, তবে যমজ জন্মের হার কল্পনার চেয়েও বেশি বাড়তে পারে!
এই পরিবর্তন নিঃসন্দেহে কিছু গুরুতর ঝুঁকি নিয়ে আসছে। এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও, যমজ শিশুরা একক শিশুদের তুলনায় মৃত অবস্থায় জন্ম নেওয়া বা জন্মের পরপরই মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে অনেক বেশি থাকে। দুটি শিশুকে গর্ভে ধারণ করা মানে গর্ভাবস্থায় জটিলতা বাড়া, এবং শিশুরা অপরিণত বা কম ওজন নিয়ে জন্মানোর সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে যমজ শিশুদের জীবনের প্রথম মাসে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা একক শিশুদের চেয়ে দশগুণ বেশি! এই অতিরিক্ত ঝুঁকিগুলো সামলাতে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। যমজদের গর্ভাবস্থা পরিচালনা করতে একক সন্তানের গর্ভাবস্থার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি খরচ হতে পারে।
শিশু মৃত্যুর হার কমাতে দক্ষিণ এশিয়া দারুণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। ১৯৯০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হার ৭২% কমেছে। তবে বিশাল জনসংখ্যার কারণে, বিশ্বের নবজাতক মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ এখনও এই অঞ্চলে ঘটে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এস.ভি. সুব্রামানিয়ান, যিনি ভারতে যমজ শিশুদের মৃত্যুহার নিয়ে গবেষণা করেছেন, তিনি মনে করেন, আরও বেশি নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট এবং সিজারিয়ান সেকশনের সহজলভ্যতা যমজ গর্ভাবস্থার উচ্চ ঝুঁকির অনেকটাই প্রশমিত করতে সাহায্য করবে। এসবের খরচ অনেক। কিন্তু এই ধরনের বিনিয়োগ ছাড়া, এই নীরব জনসংখ্যাগত পরিবর্তন আমাদের এতদিনের অগ্রগতিকে পিছিয়ে দিতে পারে!
