মঙ্গলবার থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে জেট ফুয়েল পাঠাবে পদ্মা অয়েল
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে ১৭০ কোটি টাকার পাইপলাইন উদ্বোধন করতে যাচ্ছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ডিপো থেকে সরাসরি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেট ফুয়েল সরবরাহ করা হবে। দেশের কোনো বিমানবন্দরে এ ধরনের সুবিধা এই প্রথম।
পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এই প্রকল্পকে দেশের জ্বালানি খাতের একটি মাইলফলক হিসেবে ধরা হচ্ছে।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি বিশেষ পাইপলাইনের মাধ্যমে বিমানবন্দরে জেট ফুয়েল পৌঁছাবে। অন্য কোনো বিমানবন্দরে এ সুবিধা নেই। শাহ আমানতই প্রথম।"
পদ্মা অয়েলের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই পাইপলাইন কমিশনিংয়ের আগে চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
মফিজুর রহমান বলেন, "আমরা উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে করছি। যদিও মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে উদ্বোধনের কথা ছিল, তবে আমরা মঙ্গলবারই (২৩ সেপ্টেম্বর) এটি চালু করব। উদ্বোধনের সময় জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।"
এর আগে, গত ১০-১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন লাইন দিয়ে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার লিটার জেট ফুয়েল শাহ আমানত বিমানবন্দরে সরবরাহ করা হয়।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিমানবন্দরে দৈনিক গড়ে ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার লিটার জেট ফুয়েল প্রয়োজন হয়। হজ মৌসুমে এ চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩ লাখ লিটারে। এতদিন ভাউচারের মাধ্যমে ট্রাকে করে জ্বালানি পরিবহন করা হতো, যেখানে ১৫ থেকে ২০টি ট্রিপ এবং সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত।
নতুন পাইপলাইনের মাধ্যমে মাত্র ৯০ মিনিটেই জ্বালানি সরবরাহ সম্ভব হবে। এতে বছরে অন্তত আড়াই কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক ও পদ্মা অয়েলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং) অনুপ কুমার বড়ুয়া।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে আরও বলেন, "সড়কপথে জেট ফুয়েল পরিবহন ছিল সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন পাইপলাইন সরবরাহকে নিরাপদ, দ্রুত ও সাশ্রয়ী করবে।"
'চট্টগ্রামের গুপ্তখাল এলাকার মেইন ইনস্টলেশন (এমআই) থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত জেট এ-১ পাইপলাইন' নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর। প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭০ কোটি টাকা, তবে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৫৫ কোটি টাকা।
প্রকল্পটির আওতায় ৫ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৮ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় ১৪০ ঘনমিটার জেট ফুয়েল পরিবহন করতে সক্ষম। পাইপলাইনটিতে আধুনিক মনিটরিং সিস্টেমও যুক্ত করা হয়েছে।
অনুপ কুমার বড়ুয়া জানান, এ ব্যবস্থাপনায় খুব অল্প জনবল প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, "আগে বিমানবন্দরে তেল পৌঁছাতে ১০ থেকে ১৫ জন মানুষের প্রয়োজন হতো। এখন একজন অপারেটর কম্পিউটারের মাধ্যমে পাম্প চালাতে পারবেন।"
সফল কমিশনিংয়ের পর এখন চলছে পরীক্ষামূলক সরবরাহ। অনুপ কুমার বড়ুয়া বলেন, "আমরা ইতোমধ্যেই দুই দিনে ৩ লাখ ৫০ হাজার লিটার জেট ফুয়েল পাঠিয়েছি। পরিকল্পনার আগেই আমরা প্রকল্পটি উদ্বোধনের আশা করছি।"
