ভোটসামগ্রী পৌঁছাচ্ছে নির্বাচন ভবনে, ইসির জন্য বরাদ্দ ২,৯৫৬ কোটি টাকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে পৌঁছাতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কার্যাদেশ অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই ধাপে ধাপে এসব সামগ্রী সরবরাহ হচ্ছে।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব সামগ্রী কেনাকাটা শেষ হবে। মনোনয়নপত্র, আচরণবিধি, প্রতীকের পোস্টার পরিচালনা ম্যানুয়েলসহ নির্বাচনি প্রাথমিক মালামাল প্রস্তুত ও বিতরণ করা হবে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সোমবার নির্বাচনি সামগ্রী সংরক্ষণস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, 'আগেই জানিয়েছিলাম যে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব সরঞ্জাম কেনাকাটা শেষ হবে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই সব পাওয়া যাবে।'
এখন পর্যন্ত অন্তত ছয় ধরনের সামগ্রী নির্বাচন ভবনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে রয়েছে লাল সিলগালা, ব্যালট বাক্সের লক, অফিসিয়াল সিলগালা, পিতলের সিল ও বিভিন্ন আকৃতির পাটের বস্তা। এর মধ্যে পিতলের সিল ও বড় আকারের পাটের বস্তা ছাড়া অন্যগুলো ভবনে মজুদ রাখা হয়েছে।

ইসি ৫০ লাখ ব্যালট বাক্সের লক এবং ১৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিং সিল কিনছে। নির্বাচনের জন্য লাল সিলগালার চাহিদা ২৩ হাজার কেজি। সেপ্টেম্বরের শুরুতে পাঁচ লাখ ব্যালট বাক্সের লক, পাঁচ লাখ দাপ্তরিক সিল এবং দেড় লাখ মার্কিং সিল সরবরাহ হয়েছে। পিতলের সিলের চাহিদা ১ লাখ ১৫ হাজার হলেও রিটেন্ডার হওয়ায় সরবরাহে দেরি হচ্ছে। একই কারণে ১ লাখ ১৫ হাজার পাটের বস্তাও এখনো পাওয়া যায়নি।
ইসির উপ-সচিব রাশেদুল ইসলাম জানান, আট ধরনের নির্বাচনি সরঞ্জামের মধ্যে কিছু হাতে পাওয়া গেছে। বড় ও ছোট পাটের বস্তার সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে। অন্য সামগ্রীও ধাপে ধাপে আসছে।
ইসির হিসাবে, এবার ভোটার সংখ্যা হবে প্রায় পৌনে ১৩ কোটি। সে অনুযায়ী প্রয়োজন হবে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্র ও দুই লাখের বেশি ভোটকক্ষ। প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স, সিল, সুঁই-সুতা, দিয়াশলাই, আঠা, অমোচনীয় কালি, ফরম, স্ট্যাম্প প্যাড, কলম ও প্লাস্টিকের পাতসহ প্রায় ২১ ধরনের সামগ্রী সরবরাহ করা হবে।
কমিশন জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে এবং তফসিল ঘোষণা হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে। তফসিল ঘোষণার পর ভোটার তালিকা অনুযায়ী ধাপে ধাপে আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা অফিসে সরঞ্জাম বিতরণ করা হবে। এরপর নিরাপত্তার মধ্যে ভোটের আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ সব সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হবে।

প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ
ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী বছরে প্রতিষ্ঠানটির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ইসির জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালনা ব্যয় ২ হাজার ৭২৬ কোটি ৯৫ লাখ এবং উন্নয়ন খাতে ২২৯ কোটি ৫ লাখ টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তব্যে বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।'
তিনি আরও বলেন, 'গত দেড় দশকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তাই আমরা নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। এ জন্য বিভিন্ন আইন, নীতিমালা ও আদেশ সংশোধন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'
ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার এক থেকে ১৫ দিনের মধ্যে খাত ও দফাওয়ারি অর্থ বরাদ্দ নির্ধারণ, বিভাজন তালিকা প্রস্তুত, দেশি-বিদেশি পোস্টাল ব্যালটের ব্যয় নির্ধারণ এবং দুর্গম ও বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে।