ইউক্রেনের প্রধান সরকারি ভবনে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার হামলা
 
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করে, প্রথমবারের মতো কিয়েভের প্রধান সরকারি ভবনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রবিবার ভোরে এই ভয়াবহ হামলায় রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিডেনকো নিশ্চিত করেছেন যে, শত্রুর আক্রমণে প্রথমবারের মতো সরকারি কেবিনেট ভবন, এর ছাদ এবং উপরের তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ করছেন। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো জানিয়েছেন, ভূপাতিত ড্রোনের আঘাতে সরকারি ভবনটিতে আগুন লেগে থাকতে পারে। যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে এই হামলাকে একটি বড় ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধি হিসাবে দেখা হচ্ছে।
ব্যাপক হামলা ও হতাহতের ঘটনা
ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মতে, রাশিয়া রাতভর রেকর্ড সংখ্যক ৮০৫টির বেশি ড্রোন এবং ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে ৭৫১টি ড্রোন ভূপাতিত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানানো হয়।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, কিয়েভে হামলায় একজন গর্ভবতী মহিলাসহ ২০ জন বেসামরিক ব্যাক্তি আহত হয়েছেন। শহরের স্যাতোশিনস্কি জেলায় একটি আবাসিক ভবনে হামলায় ৩২ বছর বয়সী এক নারী ও তার দুই মাসের শিশুপুত্র নিহত হয়। এছাড়াও, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির নিজ শহর ক্রিভি রিহ, নিকোপোল, ক্রেমেনচুক এবং ওডেসাসহ বিভিন্ন শহরে হামলা চালানো হয়েছে। জাপোরিঝিয়াতে পৃথক হামলায় ১৭ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লেয়েন, লাটভিয়ার প্রেসিডেন্ট এডগারস রিনকেভিক্স এবং মলদোভার নেত্রী মাইয়া সান্ডু এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেনের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মিত্রদের কাছে প্যারিসে গৃহীত চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এই ধরনের হত্যাকাণ্ড একটি ইচ্ছাকৃত অপরাধ এবং যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার প্রচেষ্টা।' ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা এটিকে 'একটি গুরুতর উত্তেজনা বৃদ্ধি' বলে অভিহিত করেছেন।
রাশিয়ার অবস্থান ও প্রেক্ষাপট
এই হামলার বিষয়ে রাশিয়া সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও, দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে তারা বিভিন্ন অঞ্চলে ইউক্রেনের ৬৯টি ড্রোন প্রতিহত করেছে। অন্যদিকে, ইউক্রেন দাবি করেছে যে তারা রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে একটি তেল পাইপলাইনে হামলা চালিয়েছে।
এই হামলা এমন এক সময়ে ঘটলো যখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে কোনো পশ্চিমা 'আশ্বাস বাহিনী' মোতায়েনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং হুঁশিয়ারি দেন যে, এই ধরনের কোনো বাহিনীকে 'বৈধ লক্ষ্যবস্তু' হিসেবে গণ্য করা হবে।

 
             
 
 
 
 
