বৃষ্টির তাণ্ডবে দিল্লির শহরতলিতে তীব্র যানজট, ৮ ঘণ্টা আটকে ছিল যানবাহন
ভারতের অন্যতম ধনী শহরতলির একটিতে সোমবার বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট যানজটে হাজার হাজার যাত্রী ছয় থেকে আট ঘণ্টা রাস্তায় আটকে ছিলেন। খবর বিবিসির।
এই ঘটনার পর অনলাইনে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন কীভাবে গুরুগ্রামের মতো একটি জায়গা—যা তার ভবিষ্যৎ-প্রযুক্তির আকাশচুম্বী ভবন এবং বিস্তৃত কর্পোরেট অফিসের জন্য পরিচিত—এমন দুর্বল অবকাঠামো থাকতে পারে।
রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থিত এই শহরতলির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার অফিস, স্কুল এবং কলেজগুলোকে তাদের কার্যক্রম বাড়ি থেকে করার পরামর্শ দিয়েছে, কারণ আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
প্রবল বৃষ্টিপাতে এই বছর ভারতের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যা ও ভূমিধসে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে।
অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুরগ্রামের 'দুঃস্বপ্নের মতো' যানজট নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সেদিন একটি রাস্তায় ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল) দীর্ঘ যানজট ছিল।
একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রধান মহাসড়কের কমপক্ষে ডজনখানেক লেনে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন হয়ে গেছে।
একজন ব্যবহারকারী এক্স-এ লিখেছেন, 'গুরগ্রাম ডুবে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেখতেই আপনি এখানে অস্বাভাবিক ভাড়া দিয়ে থাকেন।'
কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী মজা করে বলেছেন যে তাদের অফিসে ঘুমিয়ে থাকা উচিত এবং অন্যরা বলেছেন যে তারা সম্ভবত হেঁটেই দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।
গুরগ্রাম হরিয়ানা রাজ্যের অংশ। এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসনাধীন।
ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যে, কেন রাজ্য গুগল, মেটা, আমেরিকান এক্সপ্রেস এবং স্যামসাং সহ বিশ্বের কয়েকটি বৃহত্তম কোম্পানির আঞ্চলিক সদর দফতর থাকা সত্ত্বেও শহরের অবকাঠামো উন্নত করতে পারেনি।
এদিকে, দিল্লি ও তার আশেপাশের শহরগুলোতেও আবহাওয়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদী গত কয়েকদিনে বিপদসীমা অতিক্রম করে কিছু নীচু এলাকা প্লাবিত করেছে। কর্তৃপক্ষ সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন।
নদীর দুই পাশের সংযোগকারী পুরাতন রেল সেতুটি ক্রমবর্ধমান পানির স্তরের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা নগরবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন যে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা বর্ষাকালে ভারতে প্রতি বছরই ভয়াবহ বন্যা দেখা যায়। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এই মৌসুমে বৃষ্টির তীব্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব এবং ভারত-শাসিত কাশ্মীরের কিছু অংশেও বৃষ্টি মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
পাঞ্জাবে বন্যার কারণে অন্তত ২৯ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। সেখানে মঙ্গলবারও আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
হিমাচল প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন মাস থেকে রাজ্যে বৃষ্টিজনিত ঘটনা—যেমন হঠাৎ বন্যা, ভূমিধস এবং সড়ক দুর্ঘটনা—৩১০ জন নিহত হয়েছে।
গত মাসে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের আশ্রয় দেওয়া একটি গ্রামে অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছিল।
৫ আগস্ট উত্তরাখণ্ডের ধরালি গ্রামের প্রায় অর্ধেক অংশ বিশাল আকস্মিক বন্যায় ডুবে গেছে।
