‘একই মামলায় কেন বারবার রিমান্ডে নেবে; কেন, আবারও কেন?’: আদালতে সোলাইমান সেলিম

জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার লালবাগ থানাধীন আজিমপুর এলাকায় আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মো. সোলাইমান সেলিমের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে রিমান্ড শুনানির আগে নিজের আইনজীবীর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'একই মামলায় কয়বার রিমান্ডে নেবে? কেন, আবারও কেন? আমি তো যা বলার, সব বলেছি।'
সোমবার (১১ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিএম ফারহান ইসতিয়াকের আদালতে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শকালে তিনি এ উদ্বেগের কথা জানান।
এদিন সকাল ৯টার দিকে সোলাইমান সেলিমকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। পরে সোয়া ১০টার দিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হাতকড়া ও হেলমেট পরানো হয়। আদালত চত্বরে ব্যারিকেড তৈরি করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের ঢালপার্টি আসামিদের সামনে ও পেছনে সাধারণ পুলিশ সদস্যদের প্রহরায় হাজতখানা থেকে সাড়ে ১০টায় বের করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় নেওয়া হয়। এরপর হেলমেট ও জ্যাকেট খুলে কাঠগড়ায় ওঠানো হয়।
পরে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন সোলাইমান সেলিম। আইনজীবীর কাছে জানতে চান, 'আজকে কোন মামলার শুনানি।' আইনজীবী বলেন, 'আপনার রিমান্ড আবেদন আছে।' সোলাইমান বলেন, 'আমার কোন মামলায় রিমান্ড চেয়েছে?' তখন আইনজীবী বলেন, 'লালবাগের খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলা। এ মামলায় আগেও আপনাকে রিমান্ডে নিয়েছে।'
তখন সোলাইমান সেলিম বলেন, 'শুধু শুধু আবার কেন রিমান্ড চাচ্ছে? একই মামলায় কয়বার রিমান্ডে নেবে? কেন, আবারও কেন? আমি তো যা যা বলার, সব বলেছি।' পরে কাঠগড়ার সামনের দিকে গিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন। বিচারক আদালতে হাজির হলে তার আইনজীবী শুনানির জন্য দাঁড়ান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ কোতয়ালী জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, 'ওনাকে আগেও এ মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা নতুনভাবে এ মামলায় ওনার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। বেসরকারি টেলিভিশনের ৫ মিনিট ৮ সেকেন্ডের একটি অরিজিনাল ভিডিওর ১ মিনিট ৯ সেকেন্ড ৩ মিনিটের সময় ছাত্রজনতার উপর হামলার জন্য তাকে নির্দেশ দিতে দেখা যায়। এই হত্যাকাণ্ডে সেখানে কোন কোন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, কারা কারা জড়িত ছিল জানা দরকার। '
তিনি আরও বলেন, 'ওনার বাবা ছিলেন এ আসনের সংসদ সদস্য। ওনাদের ইন্ধনেই সব হামলা হয়েছে। ওনাদের রিমান্ডে নেওয়া হলে সব বিষয় জানা যাবে। সেজন্য ৭ দিনের রিমান্ড চাচ্ছি।'
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার বলেন, 'ঢাকা-৭ আসনের যত ধরনের ঘটনা হয়েছে, এর জন্য তারা দায়ী। তার বাবা পূর্বে সংসদ সদস্য ছিলেন। এরপর তিনি [সোলাইমান] এ আসনের সংসদ সদস্য হন। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তারা হামলা করেছেন।'
আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, 'প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তিনি [সোলাইমান সেলিম] এ মামলায় জড়িত না। ওনাকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখনও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওনাকে এ মামলায় সংশ্লিষ্ট করার মতো কিছুই পাননি। এখনও পাওয়ার মতো কিছু নেই। যদি জিজ্ঞাসা করতে হয়, জেলগেটেও জিজ্ঞাসা করতে পারে। রিমান্ডে নিতে হবে কেন? আমি ওনার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করছি।' পরে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে আদালতের এজলাসে ওঠানোর সময় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে কখন যাইনি, ছিলামও না। আমি থাকি কোথায়, আর মামলাগুলোর ঘটনাস্থল কোথায়!'