চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচনে দুই সপ্তাহের স্থগিতাদেশ
 
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) আসন্ন নির্বাচন দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আদালত।
গতকাল (৩০ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা আপিল আবেদনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। নির্বাচনটি আগামীকাল (১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
'সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু অ্যাপিল নং ৪১৭৬/২০২৫' মামলায় হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে ১ নভেম্বরের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সিসিসিআই। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোয়ারা বেগম।
সর্বশেষ, ২০১৩ সালে চেম্বারে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর পর থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্যবসায়ীদের এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে আসছে।
সদস্যরা জানান, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বেলালের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আগেই টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ; এই দুটি শ্রেণির সদস্য বাদ দিয়ে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরে ২২ অক্টোবর ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে।
আপিলের শুনানি শেষে আপিল বিভাগ নির্বাচন দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে এবং ওই সময়ের মধ্যে মূল রিট নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়।
বেলালের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিহাদ কবির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'হাইকোর্টে রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুই সপ্তাহের জন্য নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেন।'
সদস্য শ্রেণিতে অনিয়মের অভিযোগ
সিসিসিআইয়ের ২১ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে সাধারণ শ্রেণি থেকে ১২ জন, সহযোগী শ্রেণি থেকে ৬ জন এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি থেকে ৩ জন করে পরিচালক নির্বাচিত হন। পরে পরিচালকরা সভাপতি ও দুই সহ-সভাপতি নির্বাচন করেন।
আদালতের হস্তক্ষেপের আগে এ বছর দুটি ছোট শ্রেণি থেকে ছয়জন, প্রতিটি শ্রেণি থেকে তিনজন করে; প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কথা ছিল।
চেম্বার সূত্রে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ এক তদন্তে আটটি ট্রেড ও টাউন গ্রুপ নিষ্ক্রিয় পাওয়া যায়। এর ভিত্তিতে চট্টগ্রাম গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক বেলাল ওই নিষ্ক্রিয় গ্রুপগুলোকে ভোট থেকে বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এফবিসিসিআইয়ের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেন।
পরে তিনি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন, যা ২২ অক্টোবর নিষ্পত্তি করে আদালত নির্বাচনে ওই শ্রেণিগুলোকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
নিষ্ক্রিয় গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে চারটি টাউন অ্যাসোসিয়েশন: পটিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া; এবং চারটি ট্রেড গ্রুপ: চট্টগ্রাম স্মল ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স গ্রুপ, চট্টগ্রাম টায়ার টিউব ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স গ্রুপ, চিটাগং ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স গ্রুপ এবং চিটাগং মিল্ক ফুড ইমপোর্টার্স গ্রুপ।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন
চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক অঙ্গনে এ বছরের নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল। এক দশকেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো দুটি বড় প্যানেল ইউনাইটেড বিজনেস ফোরাম এবং চট্টগ্রাম বিজনেস অ্যালায়েন্স; চেম্বারের নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাচনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
দেশের বৃহত্তম ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর একটি সিসিসিআইয়ের এই নির্বাচনকে পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সংস্কার দাবির প্রেক্ষাপটে প্রভাব পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
ব্যবসায়ী মহলের প্রতিক্রিয়া
আদালতের আদেশে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরাম।
বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, 'চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মহলে এই নির্বাচন নতুন উদ্দীপনা ও আশার সঞ্চার করেছিল। এর স্থগিতাদেশে ব্যাপক হতাশা দেখা দিয়েছে।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ব্যবসায়ী সমাজের প্রকৃত নেতৃত্ব নির্ধারিত হওয়া উচিত ভোটারদের ইচ্ছায়। যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা না রেখে আইনি লড়াইয়ের পথ বেছে নিয়েছেন, তাদের উচিত ব্যবসায়ী সমাজের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশাকে সম্মান জানানো এবং ভবিষ্যতে নির্বাচন বাধাগ্রস্তকারী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা।'
সংগঠনটি চট্টগ্রামের সাধারণ ব্যবসায়ী সমাজের পাশে থাকার ও তাদের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেছে।

 
             
 
 
 
 
