চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদোন্নতি বোর্ড স্থগিত, অবরুদ্ধ ভিসি

ছুটির দিনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতির জন্য বোর্ড বসানোকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে আন্দোলনের মুখে পদোন্নতি বোর্ড বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে উপাচার্য ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সাড়ে তিনটার দিকে তারা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, দুই উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে বিকেল ৫টার দিকে বোর্ড বাতিলের ঘোষণা এলে শিক্ষার্থীরা তালা খুলে দেন।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হয়েও পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী এনামুল হক চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কুশল বরণ ২০ নম্বর আসামি। মামলাটি ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করেন এনামুল, যাতে চিন্ময় কৃষ্ণসহ মোট ১৬৪ জনকে আসামি করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা এসময় স্লোগান দেন— 'বাহ! ভিসি চমৎকার, স্বৈরাচারের পাহারাদার' এবং 'একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জেলে ভর'।
উপাচার্য কার্যালয়ে ছাত্রশিবিরের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খালেদকে কুশল বরণ চক্রবর্তীর সঙ্গে উত্তেজিত অবস্থায় দেখা যায়। তিনি বলেন, 'কুশল বরণসহ ফ্যাসিবাদের চিহ্নিত দোসরদের আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না। প্রশাসনকে জানানো হলে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। ৩৬ জুলাইয়ের আগেই এদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।'
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোনায়েম শরীফ বলেন, 'কুশল বরণ চক্রবর্তী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশবিরোধী গুজব ছড়িয়েছেন। তাকে প্রমোশন দেওয়া মানে রাষ্ট্রবিরোধীদের উৎসাহ দেওয়া।'
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কুশল বরণ চক্রবর্তী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'খুবই নিন্দনীয়, জঘন্য ও বাজে একটি কাজ হয়েছে। দেড় বছর ধরে আমার প্রমোশন আটকে ছিল। এবার ডেট আসার পর মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে। কেউ কি দেখাতে পারবে আমার নামে মামলা আছে? সাজিয়ে বললেই কি মামলা হয়? এটি কি নথিভুক্ত হয়েছে? ঘটনার দিন আমি চট্টগ্রামেই ছিলাম না। পুলিশও বিষয়টি বুঝেছে, তাই মামলা নেয়নি। আজ যা হয়েছে, তা খুবই অন্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটি কাম্য নয়।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, 'কুশল বরণের বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিষয়ে সংবেদনশীল রিপোর্ট এসেছে সংবাদমাধ্যমে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বোর্ড বাতিল করা হয়েছে।'
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদালতের মতো কাউকে বিচার করতে পারে না। আমরা কারও জেল-জরিমানা করতে পারি না, এটি আমাদের এখতিয়ার নয়। তবে আমরা যে তদন্ত কমিটিগুলো করেছি, সেগুলো ধীরে কাজ করছে।'