চাকসু নির্বাচন: দুই প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে দুইটি প্যানেল তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে।
স্বাস্থ্যবীমা চালু থেকে শুরু করে স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গঠন, গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, সব ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীবান্ধব নানা উদ্যোগের অঙ্গীকার করেছে প্রার্থীরা।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে পৃথক অনুষ্ঠানে ইশতেহার ঘোষণা করে 'বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য' এবং 'সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ'। অন্যদিকে, সাত দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে 'বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য'।
'বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য' প্যানেলের পক্ষ থেকে ইশতেহার ঘোষণা করেন ভিপি পদপ্রার্থী আবির বিন জাবেদ এবং জিএস পদপ্রার্থী চৌধুরী তাসনীম জাহান।
সাত দফা ইশতেহারে শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা ও কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
ইশতেহারে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু, চবি মেডিকেল সেন্টারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সাইকোলজিস্ট নিয়োগ, প্রতিটি হলে ফার্মেসি স্থাপন, অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এছাড়া পরিবহন খাতে শাটল ট্রেনের শিডিউল বাড়ানো, প্রতিটি শাটলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা, আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী বাস সার্ভিস চালু এবং নারীদের জন্য আলাদা বগির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
আবাসন সংকট নিরসনে স্বল্পমেয়াদে বাড়ি ভাড়া নিয়ে হোস্টেল সুবিধা, দীর্ঘমেয়াদে নতুন হল নির্মাণ এবং নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ভাতা চালুর অঙ্গীকার করা হয়।
পাশাপাশি খাবারের মান উন্নয়ন, প্রশাসনিক জটিলতা দূর, একাডেমিক গবেষণা তহবিল বৃদ্ধি এবং স্মার্ট আইডি কার্ড চালুর কথা বলা হয়।
এছাড়াও নিরাপত্তা ও পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস গড়তে সিসিটিভি স্থাপন, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, সাইকেল ব্যবহারে উৎসাহ এবং জোবাইক ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের কথাও জানায় প্যানেলটি।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ইসলামী ছাত্র মজলিস সমর্থিত প্যানেল 'সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ' ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে।
ভিপি পদপ্রার্থী তামজিদ উদ্দিন, জিএস পদপ্রার্থী সাকিব মাহামুদ এবং এজিএস পদপ্রার্থী রোমান রহমান এ ইশতেহার উপস্থাপন করেন।
তাদের মূল প্রতিশ্রুতি হলো- 'একাডেমিক জবাবদিহি' এবং 'স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়' গঠন। ইশতেহারে বলা হয়, প্রতিটি বিভাগে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকবে, যিনি নিয়মিত ক্লাস ও পাঠদান কার্যক্রমের তথ্য প্রদান করবেন। শিক্ষকদের উপস্থিতি উন্মুক্ত বোর্ডে প্রকাশ এবং প্রতি সেমিস্টারে ওপেন সিলেবাস সভার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
'স্মার্ট কার্ড' ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রন্থাগার, হল, বাস, ক্যাফেটেরিয়া ও প্রশাসনিক সেবা একীভূত করার পরিকল্পনা তুলে ধরে প্যানেলটি।
পাশাপাশি অনলাইন ফলাফল দেখা, ফি প্রদান ও সনদপত্রের আবেদন করার পোর্টাল চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়।
ইশতেহারে আরও রয়েছে 'শিক্ষার্থী সহায়তা তহবিল' গঠন, পরামর্শ ও সুস্থতা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশ ফাঁড়ি ও সিসিটিভি বৃদ্ধি, খেলাধুলার জন্য জিমনেশিয়াম ও মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের অঙ্গীকার।
প্যানেলটি রাজনৈতিক সহিংসতা রোধে সব সংগঠনের মধ্যে 'শান্তিচুক্তি সনদ' স্বাক্ষর এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত 'উপাচার্য সংলাপ' চালুর প্রতিশ্রুতিও দেয়।
চাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই প্যানেলই শিক্ষার্থীদের কল্যাণ, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, আবাসন ও একাডেমিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। উভয় ইশতেহারেই 'স্টুডেন্ট ফার্স্ট' নীতিকে সামনে রেখে একটি আধুনিক, স্মার্ট ও শিক্ষার্থী-বান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার অঙ্গীকার স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য, আগামী ১৫ অক্টোবর হতে যাচ্ছে চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে মোট ৯০৮ জন প্রার্থী।