৩ দিন পেছাল চাকসু নির্বাচন, যা বলছেন প্রার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের তারিখ তিন দিন পেছানো হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত ১২ অক্টোবরের পরিবর্তে আগামী ১৫ অক্টোবর (বুধবার) এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে ১২ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত থাকবে।
২৩ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে চাকসু নির্বাচন কমিশন এই নতুন সময়সূচি ঘোষণা করে। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড কথা বলেছে বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
সিদ্ধান্তকে স্বাগত, তবে পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ
নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে কয়েকটি প্যানেল।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও চবি শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, 'চাকসু নির্বাচন পেছানোর ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমরা সেটাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা উদ্বিগ্নতা লক্ষ্য করেছিলাম—তারা পূজোর ছুটিতে বাড়িতে যাবে এবং সে ক্ষেত্রে তারা ক্যাম্পাসে আবার ফেরার ক্ষেত্রে ট্রেনের শিডিউল টিকিট কেনা, বাস পাওয়া এসব মিলিয়ে তাদের জন্য একটু কঠিন হয়ে যাবে।'
তিনি পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে বলেন, 'অনেক শিক্ষার্থী তাদের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে যে তাদের পরীক্ষাগুলো খুব বেশি পেছানো না হয়। পরীক্ষা যেন খুব বেশি না পিছিয়ে আগে যে শিডিউল ছিল সেভাবে নেওয়ার চেষ্টা করে এটা আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকবে।'
একই ধরনের মত প্রকাশ করেছে 'অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল'। তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার ফলে প্রার্থীরা এখন নির্বাচনী গণসংযোগে বেশি সময় পাবেন, যা একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করবে। তবে আমরা একইসাথে উল্লেখ করতে চাই যে, নির্বাচন উপলক্ষে ১২ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পেছানোর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি। কারণ এভাবে পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত হলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।'
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক ও চাকসুর ভিপি প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, 'আমরা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছি। তবে এজন্য এক সপ্তাহ পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তটি আবার চিন্তা করা দরকার। এতে অনেকগুলো বিভাগ সেশন জটে পড়তে পারে।'
প্রচারণার সময় বাড়ায় স্বস্তি
ছুটির পর প্রচারণার জন্য বাড়তি সময় পাওয়ায় বেশ কয়েকজন প্রার্থী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
চবি শাখা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ও 'বৈচিত্রের ঐক্য' প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী জশদ জাকির বলেন, 'নির্বাচন কমিশন যে ১২ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর নির্বাচন পিছিয়েছে, প্যানেল এবং প্রার্থী হিসেবে আমরা সবাই খুশি। কারণ, আমাদের ক্যাম্পাসের প্রায় ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং এই উৎসবের (দুর্গাপূজা) সাথে সম্পৃক্ত। ছুটির পরপরই আমাদের যে সংকটটি আছে, সেটা হচ্ছে প্রচারণার সময়টা অনেক কম পাচ্ছিলাম। আমরা মৌখিকভাবে এই প্রস্তাবটা করেছিলাম নির্বাচন কমিশনের কাছে যে সময়টা যেন এক সপ্তাহ পেছানো হয়। সেটা নির্বাচন কমিশন বিবেচনার জায়গা থেকে তিন দিন পিছিয়েছেন। আমরা এখন আশা করছি যে নির্বাচনটা আরেকটু বেশি অংশগ্রহণমূলক হবে।'
চাকসুতে ভিপি পদপ্রার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, 'আমাদের অনেকের অভিযোগ ছিল যে শুক্রবার, শনিবার বন্ধ (১০ ও ১১ অক্টোবর), আর রবিবার ক্যাম্পাস খুলবে। আর ওই দিনেই ভোট, এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে না। সবাই চাচ্ছিল এ সময়টা যেন বৃদ্ধি হয়। নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ। এই সিদ্ধান্তটি শিক্ষার্থীবান্ধব।'
কমিশনের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন
এদিকে, নির্বাচন কমিশনের পূর্ব পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও মানবাধিকার সম্পাদক এবং চাকসুর সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সাইদ বিন হাবিব।
তিনি বলেন, 'পূজার বন্ধ এবং বিসিএস পরীক্ষার তারিখ তো হঠাৎ হয়নি। এগুলোর শিডিউল আগে থেকেই ছিল, কিন্তু নির্বাচন কমিশন ভেবে-চিন্তে কেন আগেই ১৫ তারিখ ডেট না দিয়ে ১২ তারিখ দিয়েছে। এগুলো আগে ভাবা দরকার ছিল। আর, পাশাপাশি রাকসু পিছানোর পর পরই চাকসু পেছানো কি একই সূত্রে গাঁথা কিনা এই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।'
'এছাড়াও অনেকগুলো বিভাগ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই পরীক্ষা রি-শিডিউল করেছে যেগুলো আবার পেছাতে হবে। যার একটা প্রভাব একাডেমিকভাবে পড়তে পারে', যোগ করেন তিনি।
যা বলছে নির্বাচন কমিশন
প্রার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই তারিখ পেছানো হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, 'বন্ধের বিষয়টি নিয়ে আমরা পূর্বে অবগত ছিলাম। সবকিছু বিবেচনা করেই ১২ অক্টোবর নির্বাচনের তারিখ দেওয়া হয়েছিল এবং আমরা এ সময়েই নির্বাচন করতে পারতাম। আমাদের কোনো কিছুই ঘাটতি নেই, সকল প্রস্তুতি নেওয়া আছে। তবে গতকাল (২২ সেপ্টেম্বর) মতবিনিময় সভায় অধিকাংশ প্রার্থী ও শিক্ষার্থীর দাবি ছিল নির্বাচন কয়েকদিন পেছানোর। শুধু এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচন তিনদিন পেছানো হয়েছে। এছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই।'
উল্লেখ্য, এবারের চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭,৫২১ জন।