ভুয়া মামলায় প্রাথমিক তদন্তেই নির্দোষ ব্যক্তিরা মুক্তি পাবেন: আসিফ নজরুল

মিথ্যা ও মনগড়া মামলায় হয়রানি ঠেকাতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (ক) ধারা সংশোধন করেছে সরকার। সংশোধিত ধারায় প্রাথমিক তদন্তে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়া গেলে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা থাকবে অভিযুক্তকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার।
আজ রোববার (২৯ জুন) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, 'আইনের অপব্যবহার রোধ এবং মিথ্যা মামলা থেকে নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানী ও বাণিজ্য বন্ধে এ সংশোধনী আনা হয়েছে।'
'প্রাথমিক তদন্তে যদি দেখা যায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে অপরাধের কোনো বিশ্বাসযোগ্য সম্পৃক্ততা নেই, তবে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে মামলা থেকে বাদ দিতে পারবেন। তবে পূর্ণাঙ্গ তদন্তে যদি তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাকে ফের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে,' বলেন তিনি।
আসিফ নজরুল জানান, সংশোধনীটি একটি অধ্যাদেশ আকারে খুব শিগগিরই, সম্ভবত আগামীকালই জারি হতে পারে।
তিনি বলেন, 'মিথ্যা ও মনগড়া মামলার প্রবণতা নিয়ে আমরা খুবই বিব্রত। একটি ঘটনার পেছনে সত্যতা থাকলেও অনেক সময় মামলা বাণিজ্যের অংশ হিসেবে নিরপরাধ মানুষদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় জড়ানো হয়। এই সংস্কার তারই অবসান ঘটাতে চায়।'
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিস্তৃত আলোচনা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক বৈঠকের পর এই সংস্কার আনা হয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'খুনের মতো মামলায় তদন্ত দুই থেকে চার বছর পর্যন্ত চলে। এই সময়ে শত শত মানুষ আসামি হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বছর বছর গ্রেপ্তারের আতঙ্কে থাকেন। সংশোধনের ফলে নির্দোষ ব্যক্তিরা সেই অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পাবেন।'
নতুন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হলে তা পুলিশ সুপার (এসপি), পুলিশ কমিশনার অথবা সমমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে। তাদের নির্দেশে প্রতিবেদনটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যাবে।
'যদি ম্যাজিস্ট্রেট দেখেন যে কোনো মামলায় ১০০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু ৯০ জনের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী বা প্রমাণ নেই, তাহলে তিনি বিচার শুরুর আগেই তাদের অব্যাহতি দিতে পারবেন,' বলেন আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, এতে নির্দোষ মানুষরা আগেই আদালতের মাধ্যমে মুক্তি পাবেন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা হয়রানিমূলক মামলার সুযোগ কমে আসবে।
'আমরা আশা করি, সংশোধন কার্যকর হলে প্রাথমিক তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই, তাদের আদালত অভিযুক্তদের তালিকা থেকে বাদ দেবে। এতে মিথ্যা মামলা ও তথাকথিত মামলার বাণিজ্যের শিকার হওয়া বহু মানুষ স্বস্তি পাবেন,' বলেন তিনি।
তবে বাকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'পরবর্তী তদন্তে যদি অব্যাহতি পাওয়া কারও বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তার নাম ফের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।'