নিউইয়র্কের সম্ভাব্য প্রথম মুসলিম মেয়র কে এই জোহরান মামদানি?

৩৩ বছর বয়সী দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম জোহরান মামদানি মঙ্গলবার নিউইয়র্কের রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের মেয়র পদে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে গেছেন।
নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মেয়র নির্বাচনে মামদানি জয়ী হলে নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে তিনিই হবেন প্রথম মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র।
ভোট গণনার সময় যখন ফল আসতে শুরু করে, তখন জোহরান মামদানি বুধবার ভোরে এক টুইটে নেলসন ম্যান্ডেলার উদ্ধৃতি দিয়ে লেখেন: 'সবসময়ই অসম্ভব মনে হয়, যতক্ষণ না তা হয়ে যায়। আমার বন্ধুরা, এটি সম্পন্ন হয়েছে। আর তোমরাই তা করে দেখিয়েছ। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হতে পেরে আমি সম্মানিত।'
২০২১ সালে যৌন হয়রানির অভিযোগের মুখে পদত্যাগ করা নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো মামদানিকে ফোন করে অভিনন্দন জানান এবং পরে ম্যানহাটনের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, 'আজকের রাত ছিল অ্যাসেম্বলি সদস্য মামদানির। তিনি চমৎকার একটি প্রচারাভিযান চালিয়েছেন। তরুণদের মন ছুঁয়েছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন, তাদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে গেছেন। সত্যিই শক্তিশালী প্রচার চালিয়েছেন তিনি।'

মামদানির এই প্রত্যাশিত জয়ের পেছনে বড় রাজনৈতিক বার্তা দেখছেন বিশ্লেষকেরা। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস নির্বাচনে হেরে যাওয়া ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বলে মনে করছেন তারা।
২৪ জুন নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাটিক মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে র্যাংকড-চয়েস ভোটিংয়ের প্রথম রাউন্ডেই জোহরান মামদানি ৪৩.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে যান। তিনি পান প্রায় ৪ লাখ ৩২ হাজার ভোট। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন অ্যান্ড্রু কুমো, যিনি পান ৩৬.৪ শতাংশ বা প্রায় ৩ লাখ ৬২ হাজার ভোট।
প্রগ্রেসিভ প্রার্থী কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার তৃতীয় হন, ১১.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে। বাকি প্রার্থীরা ছিলেন তুলনামূলকভাবে ছোট পরিসরে।
কেউই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় নিউইয়র্কের র্যাঙ্কড-চয়েস নিয়ম অনুযায়ী, সর্বনিম্ন ভোট পাওয়া প্রার্থীদের একে একে বাদ দেওয়া হয় এবং তাদের ভোটারদের দ্বিতীয় পছন্দ অনুযায়ী ভোট অন্যদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।
জানা গেছে, মামদানি ল্যান্ডারসহ প্রগ্রেসিভ প্রার্থীদের অনেক ভোট পেয়ে এগিয়ে যান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছোঁয়ার পথে চলে আসেন। যদিও চূড়ান্ত ফল আসতে আরও কয়েকদিন লাগতে পারে, কুমোর পরাজয় স্বীকারই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে মামদানির জয় এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।
কে এই মামদানি?
৩৩ বছর বয়সী জোহরান কোয়ামে মামদানি একজন ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট। তিনি উগান্ডার প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানি ও ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের ছেলে।
মামদানির জন্ম উগান্ডার কামপালায়। তিনি সাত বছর বয়সে নিউইয়র্কে চলে আসেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মেইনের বোডিন কলেজ থেকে আফ্রিকান স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি কম আয়ের পরিবারের বাসাবাড়ি হারানো ঠেকাতে 'হাউজিং কাউন্সেলর' হিসেবে কাজ করতেন।
২০২০ সালে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির ৩৬ নম্বর আসন থেকে নির্বাচিত হন মামদানি। তিনি কুইন্সের আস্টোরিয়া এলাকা প্রতিনিধিত্ব করেন।

চলতি বছরের শুরুতে মামদানি বিয়ে করেছেন ২৭ বছর বয়সী সিরীয় শিল্পী রামা দুয়াজিকে। তিনি ব্রুকলিনে থাকেন। রামার কাজ দ্য নিউইয়র্কার, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ও ভাইস-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রকাশনায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি অ্যানিমেশন ও সিরামিক শিল্পেও কাজ করেন।
নির্বাচনী প্রচারে তিনি উর্দু ভাষায় ভিডিও, বলিউড ক্লিপ এবং স্প্যানিশ ভাষায় বক্তব্য ব্যবহার করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি, বিশেষ করে জেনজি-দের মাঝে।
গাজা যুদ্ধ নিয়া তার ভাবনা কী?
মামদানি আমেরিকার নির্বাচিত নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট ভাষায় ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধে সমালোচনা করেছেন। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, 'আমি সবসময় স্পষ্ট এবং সত্যের ওপর ভিত্তি করে বলি: ইসরায়েল গণহত্যা করছে।'
তিনি 'বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট, এবং স্যানকশনস' (বিডিএস) আন্দোলনের প্রবল সমর্থক। এই মাসের শুরুতে ম্যানহাটনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, 'আমার রাজনীতির মূল কথা হল অপ্রতিরোধ্য অহিংসা' — এ কারণে তিনি বিডিএস সমর্থন করেন।
মামদানির প্রচারের একটি আলোচিত ঘটনা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মেহেদি হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে, যেখানে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যদি নিউইয়র্ক আসেন, তিনি কী করবেন। মামদানি সরাসরি বলেছিলেন, 'আমি যদি মেয়র হতাম, নেতানিয়াহুকে নিউইয়র্ক আসলে গ্রেপ্তার করতাম।'

তিনি বলেন, 'এই শহরের নীতি আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে মিলে যায়। আমাদের কর্মেও এটা প্রতিফলিত হওয়া উচিত।'
মামদানি 'গ্লোবালাইজ দ্য ইনতিফাদা' স্লোগান থেকে নিজেকে দূরে সরাতে অস্বীকার করেছেন। অনেক ইহুদি নেতা ও রক্ষণশীলরা এই স্লোগানকে উসকানিমূলক এবং ইহুদি বিরোধী বলে সমালোচনা করেছে।
২০২৫ সালের জুনে 'দ্য বালওয়ার্ক' পডকাস্টে তিনি বলেছিলেন, 'আমি একজন মুসলিম, ৯/১১ পড়ে বেড়ে উঠেছি, আরবি শব্দগুলো কীভাবে ভুল অর্থে ব্যবহার কড়া হতে পারে আমি জানি।' তিনি যোগ করেন, ওই স্লোগানটি মূলত দুনিয়ার নিপীড়িত মানুষের প্রতি সংহতি জানানোর কথা বলে, কোনো সহিংসতার আহ্বান জানায় না।
কুমোর প্রচারাভিযান মামদানির মুসলিম পরিচয় ও ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছে, তাকর বিরুদ্ধে ইহুদি বিরোধিতার অভিযোগও আনা হয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর থাকায় বিশ্বের বৃহত্তম ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করে।
২০২৫ সালের জুনে এক সাক্ষাৎকারে ইসলামবিরোধী হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে মামদানি বলেন, 'এই শহর ও দেশে ইহুদি বিরোধিতার কোনো স্থান নেই।' তিনি বার বার জোর দিয়ে বলেছেন, তার সমালোচনা মার্কিন ও ইসরায়েলি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে, ইহুদিদের বিরুদ্ধে নয়।
মামদানির প্রচারণায় ছিল ২২ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক এবং বার্নি স্যান্ডার্স, আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্টেজ ও ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টির মতো প্রগতিশীল নেতাদের সমর্থন।
নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন
জোহরান মামদানির নির্বাচনী প্রচার ছিল মানুষের জীবন সহজ ও সাশ্রয়ী করে তোলার প্রতিশ্রুতিতে ভরা। তিনি চাইছেন নিউইয়র্ক সিটিকে এমন এক শহরে রূপ দিতে, যেখানে বাস, আবাসন, খাবার ও শিক্ষা সবার জন্য আরও সহজলভ্য হবে।
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে শহরের সব বাস ফ্রি করে দেবেন। তার মতে, যেখানে এই ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে, সেখানকার মানুষ উপকৃত হয়েছেন—বাসে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে, চালকদের ওপর হামলা কমেছে।

আবাসনের ক্ষেত্রেও তিনি বড় পরিকল্পনা দিয়েছেন। রেন্ট-স্ট্যাবিলাইজড ফ্ল্যাটে ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ করার পাশাপাশি তিনি একটি নতুন সরকারি সংস্থা গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, যারা সাশ্রয়ী দামে সরকারি মালিকানার ফ্ল্যাট বানাবে। শহরের মালিকানাধীন ভবনের ভাড়াও কমানোর কথা বলেছেন তিনি। ভাড়াটিয়াদের অধিক সুরক্ষা দেওয়ার কথাও তাঁর পরিকল্পনায় রয়েছে।
খাবার ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও তার পরিকল্পনা স্পষ্ট। তিনি প্রতিটি বরোতে ( স্বতন্ত্র প্রশাসনিক উপঅঞ্চল) একটি করে সরকারি মুদি দোকান খোলার কথা বলেছেন, যেন যেসব এলাকায় বেসরকারি দোকান নেই, সেখানকার মানুষও সস্তায় স্বাস্থ্যকর খাবার পায়। তিনি চাচ্ছেন, সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও যেন বিনা খরচে খাবার পায়। পাশাপাশি সার্বজনীন চাইল্ডকেয়ার ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
এসব কিছু বাস্তবায়নের জন্য মামদানি বড় কর সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি চাইছেন বড় কোম্পানির ওপর বেশি কর বসাতে এবং যাদের আয় বছরে ১০ লাখ ডলারের বেশি, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করতে। তার প্রচার শিবির বলছে, এতে প্রতিবছর প্রায় ৯.৪ বিলিয়ন ডলার তোলা যাবে।
জননিরাপত্তার ক্ষেত্রেও তিনি বদল আনতে চান। পুলিশের বাজেট কমিয়ে তিনি একটি নতুন বিভাগ গড়তে চান, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সংকট মোকাবেলায় অভিজ্ঞ মানুষ ও সমাজকর্মীরা কাজ করবেন।
মামদানির জয় কি আগে থেকেই প্রত্যাশিত ছিল?
ভোটের আগের কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বেশিরভাগ জরিপেই দেখা যাচ্ছিল, কুমো এগিয়ে আছেন। যদিও ভোটের দিন যতই কাছে আসছিল, মামদানির প্রতি সমর্থন বাড়ছিল।
১৮ জুন, ভোটের ছয় দিন আগে, একটি জরিপে দেখা যায় কুমো ৩৮ শতাংশ প্রথম পছন্দের ভোটে এগিয়ে, মামদানি পেয়েছেন ২৭ শতাংশ। এমনকি ওই জরিপে অনুমান করা হয়েছিল, পরের রাউন্ডগুলোতে কুমো ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জিততে পারেন।
মে মাসের শেষদিকে আরেকটি জরিপে কুমো পেয়েছিলেন ৩৭ শতাংশ, মামদানি ছিলেন অনেক পেছনে, মাত্র ১৭ শতাংশে। এপ্রিলের এক পুরোনো জরিপে দেখা যায়, কুমোর ছিল ৩৯ শতাংশ, মামদানির ১৫ শতাংশ।
কুমো ছিলেন অনেক পরিচিত নাম—তার বাবা মারিও কুমো নিউইয়র্কের গভর্নর ছিলেন। তার প্রচারে অনেক টাকা ছিল, শহরজুড়ে টিভি, পোস্টার ও চিঠির মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিলেন।
অন্যদিকে মামদানির প্রচার ছিল পুরোপুরি সাধারণ মানুষের ওপর নির্ভরশীল—স্বেচ্ছাসেবক, ছোট ছোট দানের টাকা আর তরুণ ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণই তাকে জিতিয়ে দিয়েছে। তিনি মূলত কুইন্স, ব্রুকলিন আর ম্যানহাটনের কিছু অংশে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে কাজ করেছেন।
কুমোসহ ডেমোক্র্যাটদের অনেকে বলেছিলেন, মামদানি মেয়র হওয়ার মতো যোগ্য নন, কারণ তার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা কম। তবে মঙ্গলবার দেখা গেল, এসব অভিযোগ ভোটারদের কাছে তেমন কাজ করেনি।
মামদানি কি নিউইয়র্ক সিটির পরবর্তী মেয়র হতে যাচ্ছেন?
এ বছরের ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক সিটির সাধারণ মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া, যিনি ২০২১ সালের নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন।

প্রাইমারির চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর মামদানি আনুষ্ঠানিকভাবে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হবেন। নিউইয়র্ক সিটিতে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা খুবই বেশি—প্রতিটি রিপাবলিকানের বিপরীতে সেখানে ছয়জনের বেশি ডেমোক্র্যাট রয়েছেন। তাই মামদানি এই নির্বাচনে জয়ের দিক থেকে খুবই এগিয়ে।
নিউইয়র্কে সর্বশেষ কোনো রিপাবলিকান মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০০১ সালে—মাইকেল ব্লুমবার্গ। যদিও প্রথমে তিনি রিপাবলিকান হিসেবে জিতেছিলেন, পরে ২০০৭ সালে তিনি নিজেকে 'ইন্ডিপেনডেন্ট' (স্বতন্ত্র) ঘোষণা করেন।
সব মিলিয়ে, মামদানি এখন প্রবলভাবে এগিয়ে আছেন এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনিই হতে যাচ্ছেন নিউইয়র্ক সিটির পরবর্তী মেয়র।