২০৩০ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য সেমিকন্ডাক্টর খাতের; চায় সরকারি সহায়তা ও নীতিগত পরিবর্তন

২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকারের কাছে একটি নীতিগত সহায়তার প্যাকেজ চেয়েছে বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআইএ)। প্রস্তাবিত এই প্যাকেজে নগদ প্রণোদনা এবং কর-ভ্যাট ছাড়ের মতো বিভিন্ন সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গত মাসের শেষদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনকে পাঠানো এক চিঠিতে সদ্যগঠিত এই অ্যাসোসিয়েশন সেমিকন্ডাক্টর সেবা রপ্তানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ঘোষণার অনুরোধ জানায়। তাদের মতে, বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এ ধরনের সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো সেমিকন্ডাক্টর শিল্প গড়ে তোলার জন্য বিপুল সরকারি ব্যয়ের পরিকল্পনা করছে, যাতে তারা আগামী পাঁচ বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক বাজারে অংশ নিতে পারে।
বিএসআইএর বক্তব্য, রপ্তানি খাতে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি পোশাক, সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা, চামড়াজাত পণ্য, চা, পাট, হিমায়িত মাছ এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্প যেভাবে সরকারি প্রণোদনা পেয়ে আসছে, তেমনি সেমিকন্ডাক্টর খাতেও নগদ সহায়তা দিলে গবেষণা, উদ্ভাবন ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা সহজ হবে।
তাদের মতে, এর ফলে দেশে উচ্চপ্রযুক্তি খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং ইলেকট্রনিক্স ও চিপ ডিজাইনের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে।
কর-ভ্যাট ছাড় ও সহজ আমদানি প্রক্রিয়ার প্রস্তাব
নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি খাতে প্রবেশে বাংলাদেশ যেভাবে এগোচ্ছে, তার অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র সেমিকন্ডাক্টর শিল্প। এই খাতের বিকাশে কর-ভ্যাট ছাড়, সহজ আমদানি প্রক্রিয়া এবং নীতিগত সহায়তার দাবিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে বিএসআইএ।
চিঠিতে তারা সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ডিজাইন সফটওয়্যার, যন্ত্রপাতি, উপাদান ও সংশ্লিষ্ট সেবা কেনাকাটায় ১২ বছরের জন্য কর মওকুফ এবং ১০ বছরের জন্য ভ্যাট ছাড়ের দাবি জানিয়েছে।
তারা আরও বলেছে, উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করার সুযোগ এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষামূলক যন্ত্রপাতিকে ০–১ শতাংশ শুল্কের আওতায় আনলে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো আঞ্চলিক প্রতিযোগীদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে।
বিএসআইএ আমদানি ও অপারেশন পরিচালনার প্রক্রিয়া আরও সহজ করার সুপারিশ করেছে। সংগঠনটি বলেছে, সেমিকন্ডাক্টর পরীক্ষার যন্ত্রপাতি অনেক সময় স্বল্পমেয়াদে বিদেশ থেকে লিজে এনে ব্যবহার শেষে পুনরায় রপ্তানি করতে হয়।
এই প্রক্রিয়ায় যাতে অতিরিক্ত জটিলতা ও বিলম্ব না ঘটে, সেজন্য কাস্টমস ছাড়পত্র 'গ্রিন চ্যানেল'-এর মাধ্যমে দ্রুত সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এনবিআরের অভ্যন্তরে একটি আলাদা 'সেমিকন্ডাক্টর সেল' বা হেল্পডেস্ক গঠনেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিএসআইএর মতে, জাতীয় শিল্প ও রাজস্ব কাঠামোর আওতায় সেমিকন্ডাক্টর খাতকে 'অগ্রাধিকার শিল্প' হিসেবে ঘোষণা করলে এই খাতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়বে।
এছাড়া তারা সুপারিশ করেছে, বর্তমানে হাইটেক পার্কে যে ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, তা সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন, টেস্টিং, প্যাকেজিং এবং গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি)-এ নিযুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্প্রসারণ করা হোক।
বিএসআইএর সভাপতি এম এ জব্বার সম্প্রতি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, 'বাংলাদেশ একটু দেরিতে যাত্রা শুরু করলেও এই খাতে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাখে। আমাদের সাহসী উদ্যোক্তা আছেন, আছেন মেধাবী তরুণ প্রকৌশলীরা। এখন আমাদের প্রয়োজন সঠিক নীতিগত সহায়তা।'
বিএসআইএ জানায়, তারা ইতোমধ্যে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে অগ্রসর দেশগুলোর সংগঠন, বৈশ্বিক খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি এবং সিলিকন ভ্যালিতে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ শুরু করেছে।
বর্তমানে দেশে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান—যেমন উল্কাসেমি ও নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর—চিপ ডিজাইনের সেবা দিচ্ছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় এক কোটি ডলারেরও কম।
বিএসআইএর প্রত্যাশা, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই খাত থেকে বার্ষিক আয় এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো সম্ভব হবে।