২ ঘণ্টার বৈঠক; কোনো অগ্ৰগতি ছাড়াই শেষ হলো ‘ইউক্রেন শান্তি আলোচনা’

তিন বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো সরাসরি শান্তি আলোচনায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। শুক্রবার (১৬ মে) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে বহু আকাঙ্ক্ষিত এই বৈঠক কোনো অগ্রগতি ছাড়াই মাত্র দুই ঘণ্টারও কম সময়ে শেষ হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই সংঘাত বন্ধে আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে এই বৈঠক হলো।
তুরস্কের টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা তুর্কি প্রতিনিধিদের সঙ্গে একসাথে আলোচনা করছেন। বৈঠকের শুরুতে বক্তব্য রাখেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান।
বসফরাসের তীরে দোলমাবাচ্চে প্রাসাদে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক দ্বন্দ্বরত দুই পক্ষের মধ্যে কূটনৈতিক অগ্রগতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর আগে ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরের মাস মার্চে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল দুই পক্ষ।
তবে বৃহৎ অগ্রগতির আশা এখনই করা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, 'তিনি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মুখোমুখি না হওয়া পর্যন্ত কোনও অগ্রগতি হবে না।' মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করে ওয়াশিংটনে ফেরার পথে ট্রাম্প জানান, তিনি যত দ্রুত সম্ভব পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে চান।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনও অগ্রগতির লক্ষণ দেখা যায়নি। ইউক্রেনের এক সূত্র মতে, যুদ্ধ বিরতির চুক্তি এগিয়ে নিতে রাশিয়া এমন কিছু শর্ত উপস্থাপন করেছে, যা তাদের আগের দাবিগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।
'তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি' চায় কিয়েভ
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আলোচনায় নেতৃত্বদানকারী প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, শান্তির পথে এগোতে হলে রাশিয়াকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে, অপহৃত ইউক্রেনীয় শিশুদের ফিরিয়ে দিতে হবে এবং যুদ্ধবন্দিদের বিনিময় করতে হবে।
রাশিয়া বলছে, তারা কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধ শেষ করতে চায় এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে তারা আশঙ্কা করছে, বিরতির সময় ইউক্রেন বাহিনী বিশ্রাম নিয়ে নতুন সেনা মোতায়েন করতে পারে এবং পশ্চিমা অস্ত্র সংগ্রহ করতে পারে।
পুতিন শান্তিপ্রক্রিয়ায় আন্তরিক না বলে অভিযোগ করছে ইউক্রেন ও তার মিত্ররা। এই আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন পুতিন নিজে দিলেও তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ এড়িয়ে গেছেন। পরিবর্তে তিনি মধ্যম স্তরের প্রতিনিধিদল পাঠান, যার জবাবে ইউক্রেনও সমমর্যাদার প্রতিনিধি দল পাঠায়।
বৈঠকের আগে ইস্তাম্বুলে একাধিক আলাদা বৈঠকে অংশ নেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলগ।
বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের রুবিও বলেন, আলোচনাকারী প্রতিনিধিদের স্তর বিবেচনায় বড় ধরনের কোনও অগ্রগতি তিনি আশা করছেন না।
তিনি বলেন, 'আমি ভুল হই—এটা চাই। আমি চাই আগামীকাল খবর আসুক যে, তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, তারা আন্তরিক আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে। কিন্তু আমি কেবল আমার পর্যবেক্ষণটা বলছি।'
এদিকে শুক্রবার রাশিয়া জানিয়েছে, তারা পূর্ব ইউক্রেনে ধীর গতির অভিযান চালিয়ে আরও একটি গ্রাম দখল করেছে।