ভারত-পাকিস্তান বড় বড় দাবি করলেও—স্যাটেলাইট চিত্র বলছে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চারদিনের সামরিক সংঘর্ষ ছিল— চিরবৈরী দুই দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বিস্তৃত যুদ্ধপরিস্থিতি। উভয়পক্ষই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে একে অপরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরখ করেছে এবং প্রতিপক্ষের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো হামলার ঘটনায় উভয় পক্ষই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দাবিও করেছে।
তবে স্যাটেলাইট চিত্র বলছে, হামলাগুলো যতটা বিস্তৃত ছিল, ক্ষয়ক্ষতি ততটা হয়নি। তবে পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনা আক্রান্ত হয়েছে বেশি– ভারতের তুলনায়। উভয় পক্ষের হামলাই ছিল উচ্চ-প্রযুক্তির এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে পরিচালিত।
সীমিত হলেও স্পষ্ট ক্ষতি
দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে হতাহতের ঘটনা নিশ্চিত। ভারত ৫ জন সেনার মৃত্যু স্বীকার করেছে, পাকিস্তান বলছে তাদের ১১ জন নিহত হয়েছে। ভারতের সবচেয়ে বড় ক্ষতি সম্ভবত কিছু যুদ্ধবিমান হারানো। সরকারিভাবে কিছু না বলা হলেও কূটনীতিক সূত্র এবং কর্মকর্তারা বলছেন অন্তত দুইটি, সম্ভবত তার চেয়েও বেশি বিমান হারিয়েছে ভারত।
ভারতের সামরিক সাফল্য যেখানে
ভারত বেশ কিছু পাকিস্তানি বিমানঘাঁটি ও প্রতিরক্ষা স্থাপনায় হামলা চালায়, যা কেবল প্রতীকী হামলা নয়, বরং পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতায় সরাসরি আঘাত।
ভোলারি বিমানঘাঁটি (করাচির কাছে): ভারত দাবি করে এখানকার একটি হ্যাঙ্গারে নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। স্যাটেলাইট চিত্রে হ্যাঙ্গারে ক্ষতির স্পষ্ট চিহ্ন দেখা গেছে।

নূর খান বিমানঘাঁটি (রাওয়ালপিন্ডির কাছে): এটি পাকিস্তানের সবচেয়ে সংবেদনশীল সামরিক স্থাপনাগুলোর একটি, যেখানে পরমাণু অস্ত্রের নিরাপত্তা বিভাগও অবস্থিত। ভারত এখানেও হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে।

রহিম ইয়ার খান বিমানঘাঁটি: ১০ মে পাকিস্তান জানায়, এই বিমানঘাঁটির রানওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে—এটি ভারতীয় হামলার পরে ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরগোধা বিমানঘাঁটি: ভারত এখানে রানওয়ের দুই অংশে নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালায়।
ভারতের ঘাঁটিতে পাকিস্তানের পাল্টা হামলার সাফল্য সীমিত
এদিকে পাকিস্তান জানায়, তারা ভারতের দুই ডজন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং উধমপুর বিমানঘাঁটি ধ্বংস করেছে বলেও দাবি করে। ওই ঘাঁটিতে একজন ভারতীয় সেনার নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও— ১২ মে'র স্যাটেলাইট চিত্রে সেখানে কোনো বড় ধ্বংসের চিহ্ন দেখা যায়নি।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে চারটি ঘাঁটিতে কিছু "সীমিত ক্ষতি" হয়েছে, তবে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী যেসব ঘাঁটিতে তারা হামলা চালিয়েছে, সেসবের স্যাটেলাইট ছবি খুবই সীমিত এবং অনেক ক্ষেত্রে হামলার স্পষ্ট চিহ্ন দেখা যায়নি।
অর্থাৎ,উভয় দেশই নিজেদের সামরিক সফলতা ও শত্রুপক্ষের বিপুল ক্ষতির দাবি করলেও স্বাধীন উৎস থেকে প্রাপ্ত স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে: ভারতের হামলা ছিল বেশি নির্ভুল এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে।
সংঘর্ষে প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধের নতুন যুগের প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে—যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে, ব্যাপক ধ্বংস না করেই।
অতএব, এই সংঘাতে পাকিস্তানের সামরিক ঘাটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার দিক থেকে ভারতের কৌশলগত সাফল্যই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের সমরাস্ত্র ধবংসের দাবিতে পাকিস্তান এগিয়ে থাকলেও— শত্রুঘাঁটিতে আঘাত হানায় পিছিয়েই রয়েছে। একে অন্যের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে দুই দেশের বাগাড়ম্বর প্রচুর হলেও– বাস্তবে ক্ষয়ক্ষতি তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।
তবে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পুরো পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ এবং ভবিষ্যত-ও অনিশ্চিত।