আগামী বাজেটে ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চায় এসএমই ফাউন্ডেশন

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমই ফাউন্ডেশন) কর্মকর্তারা।
ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে এসএমই ক্লাস্টারের উন্নয়ন সাধনে এই বাজেট বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সহযোগিতায় আয়োজিত 'এসএমই-বন্ধব বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৫-২৬' শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়।
গতকাল রাজধানীর ইআরএফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশরাফুল ইসলাম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম।
সভার এক পর্যায়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, "সরকার জাতীয় বাজেটে এসএমই খাত উন্নয়নে বড় বরাদ্দ দেয়। তবে আমরা চাই এসএমই ফাউন্ডেশনের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ থাকুক, যাতে আমরা সরাসরি সেই অর্থ দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি।"
তিনি বলেন, "এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের সম্পর্ক খুব গভীর। আমরা তাদের দক্ষতা উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং ব্যাংক ঋণের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট তৈরি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিই। উদ্যোক্তাদের জন্য সার্টিফিকেট দেই, বিভিন্ন মেলা আয়োজন করে বাজার সংযোগ তৈরি করি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসএমই ক্লাস্টার উন্নয়নে কাজ করি এবং উদ্যোক্তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ (এআই) নানা স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দিই।"
"এসএমই খাতের উন্নয়নে আমরা যেভাবে কাজ করছি, অন্যরা হয়তো সেভাবে করছে না। তাই আমাদের জন্য বাজেটে আলাদাভাবে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন," বলেন তিনি।
আনোয়ার হোসেন চৌধুরী আরও জানান, "এসএমই ফাউন্ডেশনের ১৫৩টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৭৫টি শূন্য। আমাদের পুঁজির বড় অংশই ভবনের ভাড়া দিতে চলে যায়। এজন্য আমরা সরকারের কাছে নিজস্ব ভবনের আবেদন জানিয়েছি।"
তিনি বলেন, "এসএমই খাতই বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। দেশের ৯৯ শতাংশ শিল্প এসএমই খাতের আওতায়। এখানে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ উদ্যোক্তা রয়েছে, যারা প্রায় ৩ কোটি ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করছে। তাই এই খাতকে এগিয়ে নিতে বিশেষ বরাদ্দের প্রয়োজন।"
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, "মাইক্রো উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ট্যাক্স পলিসি প্রয়োজন, যাতে দেশীয় শিল্প বিকাশ লাভ করে।"
এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সভায় একটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন। তিনি জানান, "দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে নীতি সহায়তার জন্য এনবিআরের কাছে ইতোমধ্যে ১৪০টি প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে।"
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চাই। দেশের ১৭৭টি এসএমই ক্লাস্টারে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপন জরুরি। একটি ক্লাস্টারে সিএফসি স্থাপনে প্রায় ১ কোটি টাকা প্রয়োজন।"
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় এসএমই ফাউন্ডেশনকে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই অর্থ ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রেখে প্রাপ্ত আয় থেকে ফাউন্ডেশন পরিচালনা এবং উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ব্যয় করা হচ্ছে।
এছাড়া, করোনাকালে উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে সরকার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়, যা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে।