রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের বিষয়ে বিবেচনা করবে সরকার: শ্রম সচিব

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের বিষয়ে বিবেচনা করবে সরকার।
তিনি বলেন, 'রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত শ্রমিক যারা রয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্য কি কি করা যায়, এছাড়াও যেসব দাবি রয়েছে, আমাদের একটি ট্রাস্ট ফান্ড আছে, সেগুলো কিভাবে করা যায়, সেগুলো আমরা বিবেচনা করব।'
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রানা প্লাজার সামনে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিহত শ্রমিকদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই কথা জানান তিনি।
এসময় তিনি বলেন, 'আমি আজ জুরাইন কবরস্থানে গিয়েছি, সেখানে অজ্ঞাতনামা প্রায় ২৫০ জনের মত লাশ আছে, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রথম আমি সকালে সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি, এবার আজকে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মত এখানে এসেছি। এখানে আসার পরে আমরা শ্রমিকদের যেই দাবিগুলো রয়েছে সেগুলো এনডোর্স করছি।'
তিনি আরও বলেন, 'পাশাপাশি এই মুহুর্তে সবচেয়ে যেটি গুরুত্বপূর্ণ যে এটির বিচার হওয়া, যেটি ১২ বছরে হয়নি। আমি ইতোমধ্যে যেটি ব্যবস্থা নিচ্ছি যে আগামী বছর যখন আমরা এই দিনটি পালন করবো, তখন দেখবেন যে বিচারের একটি বড় অংশ শেষ হবে।'
শ্রম সচিব বলেন, 'রানা প্লাজা ধসের আজ ১২ তম দিবস, এক যুগ পার হলো। এই এক যুগ পার হওয়ার পরেও শ্রমিকদের যেই অধিকার, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেই শ্রম অধিকার আছে, এখনো আমরা সেটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারিনি।'
তিনি বলেন, 'রানা প্লাজার ঘটনা সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার মানা হয়নি, এবং সেটির কারনে যেই ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেটি হলো রানা প্লাজা, এই যে বিল্ডিংটা, শুধু এটি যিনি বানিয়েছেন তিনি না, তাকে যারা অনুমতি দিয়েছেন, এবং এখানে সরকারি যেই দপ্তরগুলো আছে, সবার নেগলিজেন্সি ছিল। এই ঘটনার পরে সারা বিশ্বব্যাপী যখন হৈ চৈ পড়ে গেলো, তখন আমাদের ব্রান্ড বায়াররা আসলো, অ্যাকর্ড এলায়েন্স আসলো, এতে করে যেটি হয়েছে যে আমাদের যেই কারখানাগুলো বিশেষ করে আরএমজি কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্সের মধ্যে আসলো।'
সচিব এসময় আরও বলেন, 'এছাড়াও রানা প্লাজা ছাড়াও অনেক ঘটনা ঘটেছে, এগুলো যাতে পুরোপুরি বন্ধ হয় সেসব বিষয় নিয়ে সরকার ও শ্রম মন্ত্রণালয় কাজ করছে।'
তিনি বলেন, 'আগামী ২৮ তারিখ শোভন কর্মপরিবেশ দিবস, মে দিবস আমরা পালন করছি সেখানে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন এবং আমাদের শ্রম উপদেষ্টা তিনিও যেটি নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে আমরা শ্রমিকদের যেই ন্যায্য অধিকার, আগামী এক বছর আমরা একটি প্যাকেজ নিচ্ছি, সেখানে দেখতে পাবেন যে কতটুকু অগ্রগতি হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'শ্রমিকদের অধিকার যদি বাস্তবায়ন হয়, তবেই আমাদের দেশের উন্নয়ন হবে, আমাদের অর্থনীতি বাড়বে। শ্রমিকদের যেই দাবি, তাদের অধিকারের বিষয়গুলো আমরা বাস্তবায়ন করব।'
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার রানা প্লাজা নামের ভবনটি ধসে পড়ে। ওই ভবনের তৃতীয় থেকে সপ্তম তলাতে ছিল পোশাক কারখানা। সেদিন ভবনটিতে কাজ করছিল প্রায় ৩,০০০ শ্রমিক। বেলা সাড়ে ৯টার দিকে বিকট শব্দে প্রথম তলার ওপরে পুরো ভবন ধসে পড়ে।
ধসের একদিন আগেই ওই ভবনের চার ও পাঁচ তলার কয়েকটি পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছিল। এ কারণে শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসেন। স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সেখানে গেলেও মালিক কর্তৃপক্ষ সংবাদকর্মীদের ভবনে ঢুকতে দেননি। পরদিন সকালে অনেকটা জোর করেই শ্রমিকদের ওই ভবনে কাজ করতে বাধ্য করে মালিক কর্তৃপক্ষ।
রানা প্লাজা ধসের পরপরই শুরু হয় উদ্ধার কাজ। শুরুতে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ে উদ্ধার কাজে যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।
ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে একে একে উদ্ধার হতে থাকে জীবিত, আহত, মৃত মানুষের দেহ। প্রায় ১৭ দিনের উদ্ধার অভিযানে রানা প্লাজার ভবন থেকে ১,১৩৬ জন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল ২,৪৩৮ জন শ্রমিককে।