ট্রাম্পের শুল্কারোপ: বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক বার্তা পাঠাতে বিডাকে পরামর্শ ব্যবসায়ী নেতাদের

বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের জেরে শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শক্তিশালী ও ইতিবাচক বার্তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ শনিবার (৫ এপ্রিল) ঢাকায় বিডার সঙ্গে এক বৈঠকে তারা এ আহ্বান জানান।
বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করা এবং বিশেষ করে ঢাকায় আসন্ন শীর্ষ বিনিয়োগ সম্মেলনের আগে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখতে বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসেবে এ আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের সম্ভাব্য পরিণতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছেও আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
বৈঠকে উপস্থিত সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা পাল্টা শুল্কের বিষয়ে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে কীভাবে তাদের কাছে ইতিবাচক বার্তা দিতে পারে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
'আমরা বিডার শীর্ষ নির্বাহীকে এও পরামর্শ দিয়েছি যে সরকারকে তাৎক্ষণিকভাবে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত,' যোগ করেন তিনি। তবে পরামর্শগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান, মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারপারসন রুবানা হক এবং বাংলাদেশ লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।
বিডা ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল একটি বড় আকারের শীর্ষ বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চারদিনের এ সম্মেলন রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মেলনের লক্ষ্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে—নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল অর্থনীতি, টেক্সটাইল ও পোশাক, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ শিল্প এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণ—বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
আয়োজকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের উপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার 'বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫'-এ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে একটি হ্রাসকৃত শুল্ক কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করেছে।
তাদের ভাষ্য, তারা শীর্ষ সম্মেলনটিকে একটি মাইলফলক ইভেন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে চান, যেখানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং [জুলাই] অভ্যুত্থান-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংস্কারকে তুলে ধরা হবে। ইতোমধ্যে বিশ্বের ৫০টি দেশ থেকে ২ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি ব্যক্তি সামিটে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন ৫৫০ জনেরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন 'রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ' নীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প কোন দেশের ওপর কি পরিমাণ পারস্পরিক শুল্ক [রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ] আরোপ করছেন, তার একটি তালিকা তুলে ধরেন।
সেখানে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, চীনের ওপর ৩৪ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর ২০ শতাংশ শুল্কারোপের কথা বলা হয়।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কারোপ নিয়ে আলোচনার জন্য জরুরি বৈঠক ডেকেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে শনিবার জরুরি বৈঠকের বিষয়টি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে ট্রাম্প যখন তার নতুন শুল্কের ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তখন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ব্যাংককে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছিলেন। সেখান থেকে গতকাল দেশে ফিরে আজ শনিবার তিনি এ বিষয়ে জরুরি বৈঠকের ডাক দেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আশা প্রকাশ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক ইস্যু সমাধানে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে।
তিনি বলেন, 'আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছাতে পারব।'
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) ব্যাংককে প্রেস সচিব শফিকুল আলম অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসসকে এ কথা বলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের কয়েক ঘণ্টা পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক পর্যালোচনা করছে।
গত ৩ এপ্রিল সকাল ৮টা ৩২ মিনিটে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এক প্রেস বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, 'জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দ্রুত শুল্কহার যুক্তিসঙ্গত করার বিকল্পগুলো খতিয়ে দেখছে, যা বিষয়টি সমাধানের জন্য জরুরি।'
বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, 'ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। মার্কিন সরকারের সঙ্গে আমাদের চলমান কাজ এই শুল্ক ইস্যু মোকাবিলায় সহায়ক হবে বলে আশা করছি।'
প্রধান উপদেষ্টা থাইল্যান্ড সফরে বিমসটেক সম্মেলনে যোগদান ছাড়াও সাইডলাইনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন।
গত ২ থেকে ৪ এপ্রিল তিন দিনের বিমসটেক সম্মেলন ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হয়।