তিন মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক স্থগিত চেয়ে ট্রাম্পকে প্রধান উপদেষ্টার চিঠি

বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার বিকেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লেখা চিঠিতে এ অনুরোধ জানান তিনি।
আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

নিচে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া চিঠিটি অনুবাদ করে দেওয়া হলো—
প্রিয় মিস্টার প্রেসিডেন্ট,
আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আপনার বাণিজ্য এজেন্ডাকে সমর্থন করতে বাংলাদেশ দরকারি সব পদক্ষেপ নেবে।
আপনার অভিষেক হওয়ার স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমি আমার উচ্চ প্রতিনিধিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়েছিলাম, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের ক্রমবর্ধমান বাজারে টেকসইভাবে আমেরিকান রপ্তানি বাড়াতে আমাদের অভিপ্রায় প্রকাশ করে।
আমরাই প্রথম দেশ যারা এ ধরনের সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েক বছরব্যাপী তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া প্রথম দেশও আমরাই। আপনি এলএনজি রপ্তানির পারমিটে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ায়— এক্ষেত্রে আমরা আরও সহযোগিতার সম্ভাবনা অনুসন্ধান করছি।
বাংলাদেশে আমেরিকার রপ্তানি দ্রুতহাড়ে বাড়াতে তখন থেকেই আমাদের কর্মকর্তারা তাদের মার্কিন সমকক্ষদের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। আমাদের এপর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরকে বিস্তারিত জানাবেন আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা।
আমাদের পদক্ষেপগুলোর ক্ষেত্রে মূল গুরুত্বের জায়গায় রয়েছে— যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিনের মতো কৃষিপণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়ানো, যা মার্কিন কৃষকদের আয় ও জীবিকানির্বাহে অবদান রাখবে। মার্কিন তুলার দ্রুত বাজার প্রবেশের জন্য, আমরা বাংলাদেশে ডেডিকেটেড বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা চূড়ান্ত করছি, যেখানে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধা মিলবে।
আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে মার্কিন পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন শুল্ক রয়েছে বাংলাদেশে। এছাড়া, আমরা উপরোক্ত মার্কিন কৃষিপণ্য ও স্ক্র্যাপ মেটাল আমদানিতে শূন্য শুল্কের সুবিধা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গ্যাস টার্বাইন, সেমিকন্ডাক্টর এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি আইটেমগুলোতেও আমরা ৫০ শতাংশ শুল্ক কমাতে কাজ করছি।
মার্কিন রপ্তানির ওপর একগুচ্ছ অশুল্ক বাধাও (নন-ট্যারিফ) দূর করছি আমরা। (মার্কিন পণ্যে) আমরা নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বাতিল করছি। প্যাকেজিং, লেবেলিং ও সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়ার যৌক্তিকীকরণ করছি, এবং বাণিজ্য-সহায়ক পদক্ষেপ হিসেবে শুল্ক (কাস্টম) প্রক্রিয়া ও মান সহজতর করছি।
বাংলাদেশে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা চালু করতে আমরা ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় ধাপগুলো সম্পন্ন করেছি। এমন গতিশীল উদ্যোগ বেসামরিক বিমান চলাচল, সামরিক খাতসহ অগ্রসর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নতুন যুগের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আমরা আগামী প্রান্তিকের মধ্যে আমাদের পরিকল্পনা অনুসারে কাজ শেষ করব। এসব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক সভার জন্য দয়া করে প্রয়োজনীয় সময় দেবেন। তাই আমি আপনাকে অনুরোধ করতে চাই যে, বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করুন। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, আপনি আমাদের অনুরোধ রাখবেন।
মি. প্রেসিডেন্ট অনুগ্রহপূর্বক আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ এই আশ্বাসকে গ্রহণ করবেন।
আন্তরিকতা প্রকাশে,
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস