শিশু ধর্ষণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করবে সরকার

অন্তর্বর্তী সরকার নীতিগতভাবে শিশু ধর্ষণের মামলা নিষ্পত্তির জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান প্রবর্তনসহ বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এসময় উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, একটা স্পেশাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে সারাদেশে চলমান নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আলোচনা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ এর বেশ কিছু সংশোধন আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব করা হলে পরিষদ নীতিগত অনুমোদন দেয়। উপদেষ্টারা কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেসব সংশোধন করে বৃহস্পতিবার আইন চূড়ান্ত করে গেজেট হবে।
তিনি আরও বলেন, আরও দুটি জায়গায় ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করা হবে এবং বিশেষ জুডিশিয়ারির মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে। যেন অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিচারক সংকট কমে আসে।
রিজওয়ানা বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়াও, মাজার ভাঙার ব্যাপার সরকার কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছেন এই উপদেষ্টা।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ধর্ষণের ক্ষেত্রে বিচারের ও তদন্তের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এজন্য ধর্ষণের সংজ্ঞার পরিধি বিস্তৃত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিশু ধর্ষণের বিচারের জন্য আলাদা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। এতে উপদেষ্টা পরিষদের সবাই সমর্থন দিয়েছেন।
আসিফ নজরুল বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার আধিক্য থাকায় মামলার জট লেগে যেত। এজন্য বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কিংবা প্রতারণা করে সম্মতির সাথে যে ধর্ষণের ঘটনা সেটিকে আলাদা অপরাধ হিসেবে এবং সম্মতি ব্যতিরেকে যে ধর্ষণের ঘটনা যেমন শিশু ধর্ষণ সেটিকে আলাদা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এজন্য শিশু ধর্ষণের জন্য বিচারের সময় কমানো হচ্ছে, এটাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।
তিনি বলেন, ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে ডেফিনেশন এক্সপান্ড ও পরিবর্তন করা হচ্ছে। শুধুমাত্র পুরুষ কর্তৃক না যেকোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে। বলৎকারকে, ধর্ষণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং শুধুমাত্র পুরুষ দ্বারা না যেকোন ফর্মে পেনিট্রেশন কিংবা অন্য বস্তু ব্যবহার করা হয়, অথবা পায়ুপথে বা যেকোনো ধর্ষণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় অনেক মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকতো। আমরা এই আইনে বিধান করেছি, আদালত যদি মনে করে ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষি সাপেক্ষে বিচার করতে পারবে।
আসিফ নজরুল বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০ সংশোধনে উপদেষ্টা পরিষদে নীতিগত অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার গেজেট আকারে সেটি প্রকাশ করা হবে।
আসিফ নজরুল বলেন, মিথ্যা মামলার ভিকটিমদের নিয়েও মামলায় উল্লেখ থাকবে। কোন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করা হলে বিচারক স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।