বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত ও তার স্ত্রীর লকার খোলার অনুমতি পেল দুদক

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও তার স্ত্রী শেনিন রুবাইয়াতের একটি লকার খুলতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুমতি দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে দুদককে রাজধানীর ধানমন্ডির মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে থাকা ওই লকার খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার (১৭ মার্চ) ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন দুদকের উপপরিচালক ও তদন্ত দলের প্রধান মাসুদুর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
দুদকের পক্ষে আদালতে আবেদন উপস্থাপন করেন পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
আবেদনে দুদকের কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ৬ ফেব্রুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদের সময় শিবলী রুবাইয়াতের কাছ থেকে তারা লকারে দম্পতির অবৈধ উপায়ে অর্জিত মূল্যবান গহনা রাখা আছে বলে জানতে পারেন।
আবেদনে বলা হয়, 'লকারটিতে অপরাধসংক্রান্ত গোপন নথিপত্রও রয়েছে। তাই দম্পতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এটি খুলে পরিদর্শন করা প্রয়োজন।'
এর আগে, ১৩ ফেব্রুয়ারি একই আদালত দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শেনিন রুবাইয়াতসহ ১১ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।
৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ৫ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করে দুদক।
এর আগে, ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে শিবলী রুবাইয়াতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন- মোনার্ক হোল্ডিং ইনকর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ এ. মতিন, ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের মালিক আরিফুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এফএভিপি ইসরাত জাহান, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখার অপারেশন ম্যানেজার ইকবাল হোসেন ও ব্যাংকটির এসইভিপি, অডিট এন্ড ইন্সপেকশন ডিপার্টমেন্ট, ও সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুয়া বাড়ি ভাড়া চুক্তিনামা দেখিয়ে আসামি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার ৩০৮ ইউএস ডলার ঘুস গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে জাভেদ এ. মতিন এর আমেরিকান নামসর্বস্ব মোনার্ক হোল্ডিং নামক কোম্পানির ব্যাংক হিসাব থেকে ৪টি ট্রানজেকশনের মাধ্যমে আসামি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম- এর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে এ টাকা লেনদেন করেন।
এছাড়া, ভুয়া পণ্য বিক্রয় চুক্তি দেখিয়ে পণ্য রপ্তানির কৌশলে ১ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকাসহ মোট ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।
বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে শেয়ারবাজার লুটপাটে সহায়তা করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার পাসপোর্ট বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত ২০২০ সালের ১৭ মে প্রথম দফায় বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পুনর্নিয়োগ পেয়ে ২০২৩ সালের ১৬ মে তিনি পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১০ আগস্ট তিনি বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগে ফিরে যান।