ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ‘ব্যর্থ’ বলে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ কোটি ডলার আটকে দিলেন ট্রাম্প

ইহুদি ছাত্রদের হয়রানি বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগে, নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। খবর বিবিসির।
শুক্রবার চারটি ফেডারেল সংস্থার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ক্যাম্পাসে ইহুদি ছাত্রদের নিরবচ্ছিন্ন হয়রানি চলতে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি গত বছর গাজা যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল সমর্থনের বিরুদ্ধে মার্কিন কলেজ ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়া ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যে-সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবৈধ বিক্ষোভকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের তহবিল বাতিল করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমাহন শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, 'ইহুদি ছাত্ররা যখন সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন ও সাম্প্রদায়িক হয়রানির শিকার হয়েছে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করেনি। আজকের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমরা কলাম্বিয়া ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে দিচ্ছি যে, তাদের এই অবহেলা আর বরদাস্ত করা হবে না।'
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, তারা এ ঘোষণাটি পর্যালোচনা করছেন এবং সরকারকে সহযোগিতা করে তহবিল পুনরুদ্ধারে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, 'আমরা কলাম্বিয়ার আইনি দায়িত্বকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিই এবং এ সিদ্ধান্তের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন। ইহুদি-বিরোধিতা রোধ ও শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এর বিখ্যাত মর্নিংসাইড হাইটস ক্যাম্পাস ম্যানহাটনের পশ্চিম পাশে অবস্থিত।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের নজিরবিহীন সীমান্ত পারাপার হামলার পর ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৪৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
যদিও জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি হয়েছিল, তবে তা সম্প্রতি ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছেছে।
গত বছর কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ হয়, যার মধ্যে 'হ্যামিলটন হল' দখলের ঘটনাও ছিল। বিক্ষোভকারীরা এর নাম পরিবর্তন করে 'হিন্দ'স হল' রাখে, গাজায় নিহত পাঁচ বছর বয়সী হিন্দ রজবের নামে।
এই বিক্ষোভের জেরে আগস্টে কলাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট মিনুশ শাফিক পদত্যাগ করেন, যা আইভি লিগের তৃতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গাজা যুদ্ধ সংক্রান্ত বিতর্কের জেরে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার পদত্যাগের ঘটনা।
কলাম্বিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ক্যাটরিনা আর্মস্ট্রং শুক্রবার এক ইমেইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটি 'অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সময়' বলে উল্লেখ করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের বরাতে জানা যায়, তিনি লিখেছেন, 'এই তহবিল বাতিলের ফলে আমাদের গবেষণা, ছাত্র ও শিক্ষকদের কার্যক্রম, এমনকি চিকিৎসা সেবা পর্যন্ত প্রভাবিত হবে।'
২০২৪ অর্থবছরে ফেডারেল তহবিল থেকে কলাম্বিয়ার মোট বার্ষিক আয়ের ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার এসেছিল।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন নিউ ইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের নির্বাহী পরিচালক ডোনা লিবারম্যান। তিনি এটিকে 'অবৈধ সিদ্ধান্ত' উল্লেখ করে বলেন, 'এটি মূলত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জোরপূর্বক এমন ছাত্র আন্দোলন দমন করতে বাধ্য করার চেষ্টা, যা ট্রাম্প প্রশাসনের আদর্শের সঙ্গে যায় না—যেমন ইসরায়েলবিরোধী সমালোচনা বা ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন।'
অন্যদিকে, ইহুদি ছাত্র সংগঠনের এক সদস্য ব্রায়ান কোহেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, তিনি মনে করেন কলাম্বিয়ার প্রতি এটি একটি 'জাগ্রত বার্তা' হতে পারে, যাতে তারা ইহুদি ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দেয়।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বার্নার্ড কলেজে বুধবারের এক 'বিক্ষোভজনিত বিশৃঙ্খলার' কারণে চার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সাময়িক বরখাস্ত এবং ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।