দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে ফাইনালে ভারতের সঙ্গী নিউজিল্যান্ড

আগে ব্যাটিং করে দুই সেঞ্চুরি ও দুই ঝড়ো ইনিংসে নিউজিল্যান্ড যে সংগ্রহ গড়ে, তা পাড়ি দিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাস পাল্টাতে হতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এমন রান তাড়ায় দ্বিতীয় উইকেটে আশা জাগলেও মিচেল স্যান্টনারের স্পিন ছোবলে পথ হারায় প্রোটিয়ারা, কেউ-ই পারলেন না দলকে ঠিক পথে ফেরাতে। একাই লড়ে যাওয়া ডেভিড মিলার শেষ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন, কিন্তু তাতে হারের ব্যবধান কমে মাত্র। দাপুটে জয়ে ফাইনালে উঠে গেল নিউজিল্যান্ড।
বুধবার লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫০ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আসরটির ফাইনালে উঠলো ব্ল্যাক ক্যাপরা। ২০০০ সালে শিরোপা জেতা দলটি ২০০৯ সালের চ্যম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হার মানে। ১৬ বছর পর আবার ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ড প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে দুর্বার ভারতকে। আগামী ৯ মার্চ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দল দুটি।
টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক স্যান্টনার। লাহোরের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়া ম্যাচসেরা রাচিন রবীন্দ্র ও কেন উইলিয়ামসন সেঞ্চুরি তুলে নেন। শেষ দিকে ঝড় তোলেন ড্যারিল মিচেল ও গ্লেন ফিলিফস। এ কজনের ব্যাটে ৬ উইকেটে ৩৬২ রান তোলে কিউইরা। যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। জবাবে মিলারের ঝড়ো সেঞ্চুরি এবং অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ও রাসি ভ্যান ডার ডুসেনের হাফ সেঞ্চুরির পরও ৯ উইকেটে ৩১২ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।
লক্ষ্য তাড়ায় দ্বিতীয় উইকেটের লড়াইয়ের পর কখনই মনে হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের পথে আছে। দ্বিতীয় উইকেটে ১০৫ রানের জুটি গড়েন বাভুমা ও ডার ডুসেন। বাভুমা ৭১ বলে ৫৬ ও ডান ডুসেন ৬৬ বলে ৬৯ রান করেন। এরপর মিলারই যা লড়েছেন। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান দাপুটে ব্যাটিংয়ে ৬৭ বলে ১০টি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ১০০ রান করেন, এটা তার ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি। এইডেন মার্করাম ৩১ রান করেন, হেনরিখ ক্লাসেন ৩ রান করেই আউট হয়ে যান। স্যান্টনার ১০ ওভারে ৪৩ রানে ৩টি উইকেট নেন। হেনরি ও ফিলিপস ২টি করে উইকেট নেন। মাইকেল ব্রেসওয়েল ও ম্যাচসেরা রাচিন পান একটি করে উইকেট।
এর আগে ব্যাটিং করা নিউজিল্যান্ড রাচিন ও উইলিয়ামসেনর ব্যাটে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দেয়। দ্বিতীয় উইকেটে ১৫৪ বলে ১৬৪ রানের জুটি গড়েন এ দুজন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যে কোনো উইকেট এটা কিউইদের সেরা জুটি। ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া রাচিন ১০১ বলে ১৩টি চার ও একটি ছক্কায় ১০৮ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন। বাঁহাতি এই ওপেনার তার পাঁচটি সেঞ্চুরিই করেছেন আইসিসিরি টুর্নামেন্টে।
৯৪ বলে ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০২ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন উইলিয়ামসন। এটা তার ১৫তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ২০১৯ সালের পর গত ফেব্রুয়ারিতে সেঞ্চুরি করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান এক মাস না যেতেই আরেকটি সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন। শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩০ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন মিচেল ও ফিলিপস। মিচেল ৩৭ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৯ রান করেন।
এরপর ব্রেসওয়েলের সঙ্গে জুটি গড়েন শেষ পর্যন্ত ব্যাট চালানো ফিলিপস। এই জুটি থেকে ২২ বলে ৪৬ রান পায় নিউজিল্যান্ড। ১২ বলে ২টি চারে ১৬ রান করেন ব্রেসওয়েল। খুনে ব্যাটিং করা ফিলিপস ২৭ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ১০ ওভারে ৭২ রানে ৩টি উইকেট নেন প্রোটিয়া পেসার লুঙ্গি এনগিডি। ১০ ওভারে ৭০ রান খরচায় কাগিসো রাবাদার শিকার ২ উইকেট। সবচেয়ে বেশি ইকোনমিতে রান দেওয়া উইয়ান মুলডার একটি উইকেট পান, ৬ ওভারে ৪৮ রান দেন তিনি।