১৩২ বছরের ইতিহাসে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে প্রথমবারের মতো অ্যাডহক কমিটি গঠন

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ১৩২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গঠিত পাঁচ সদস্যের এ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অ্যাডভোকেট মকবুল কাদের চৌধুরী। তিনি আগে সমিতির প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অ্যাডভোকেট শামসুল আলম, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, জহুরুল আলম ও রফিক আহমেদ। এদের মধ্যে মকবুল কাদের চৌধুরী, জহুরুল আলম ও রফিক আহমেদ বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সঙ্গে যুক্ত, আর শামসুল আলম ও সৈয়দ আনোয়ার হোসেন জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বাংলাদেশ ল'ইয়ার্স কাউন্সিলের সঙ্গে যুক্ত।
রোববার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সমিতির অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় এ অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, 'আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী সাধারণ সভা আহ্বান করা হয় এবং মকবুল কাদের চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে।'
সমিতির বিদায়ী সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, "সাধারণ সভায় ৫০০-এর বেশি আইনজীবী অংশ নেন। আশা করছি, অ্যাডহক কমিটি ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবে।"
রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও নির্বাচন স্থগিতের পটভূমি
এবারের বাতিল হওয়া নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও জামায়াত-সমর্থিত বাংলাদেশ ল'ইয়ার্স কাউন্সিল যৌথভাবে 'আইনজীবী ঐক্য পরিষদ' ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ 'রশিদ-জাবেদ-মাহতাব পরিষদ' নামে একটি প্যানেল গঠন করেছিল।
তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হলে নির্বাচন কমিশন প্রধানসহ পুরো নির্বাচন কমিশন ছয় দিন আগে পদত্যাগ করে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। তবে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা রোববারের সাধারণ সভা বয়কট করেন।
এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'মকবুল কাদের চৌধুরী প্রথম নির্বাচন কমিশনের প্রধান ছিলেন। পরে তিনি পদত্যাগ করেন এবং এখন অ্যাডহক কমিটির নেতৃত্বে এসেছেন, যা তিনি স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছেন।'
সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী আব্দুর রশিদ লোকমান বলেন, 'আমাদের অনেক সিনিয়র আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তাঁরা সভায় উপস্থিত হতে পারেননি। এছাড়া নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় অনেক সদস্যের আগ্রহ কমে গেছে।'
তবে তিনি অ্যাডহক কমিটির বিষয়ে বলেন, 'এর গঠনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা যদি ৬০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে, তাহলে আমরা তাকে স্বাগত জানাব।'
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়, যা পরবর্তীতে বাতিল হয়। এরপর ১৪ জানুয়ারি নতুন কমিশন গঠন করা হলেও সেটিও পরে বাতিল করা হয়। এবারের নির্বাচনে ২১টি পদের জন্য ৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন এবং ভোটার ছিলেন পাঁচ হাজার ৪০৪ জন আইনজীবী।