‘ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান’ দেখাতে বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদর্শন বন্ধ করল প্রাণ-আরএফএল

অমর একুশে বইমেলায় নারীস্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য (স্যানিটারি ন্যাপকিন) প্রদর্শনী বন্ধ করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। 'ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান' দেখাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
আজ রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রাণ-আরএফএলের মার্কেটিং ডিরেক্টর কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'স্টে সেইফ' দেশের একটি উদীয়মান স্যানিটারি প্যাডের ব্র্যান্ড। বইমেলায় আসা নারীদের জরুরি শারীরিক সুরক্ষা কথা চিন্তা করে– এটি তাদের বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছিল।
'এজন্য বাংলা একাডেমির তালিকাভুক্ত ড্রিমার ডাংকি নামের একটি ডেন্ডরের থেকে বুথ ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে নারীদের প্যাড দেওয়া হচ্ছিল। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের প্রতিস্বাক্ষর থাকা একটি চিঠিতে আমাদেরকে স্টে সেইফ ব্র্যান্ডের পণ্য প্রদর্শণ না করার অনুরোধ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, কিছু ব্যক্তির অভিযোগ, এসব গোপন পণ্য এবং প্রকাশ্যে দেখানো যাবে না, কারণ এতে মানুষজনের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগে' – তিনি আরও বলেন।
'আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি, চিঠিটি পাওয়ার পরে আমরা ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখাতে, বইমেলায় স্টে সেইফের সার্ভিস এবং সেইসঙ্গে বুথগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
বইমেলা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব সরকার আমিন অবশ্য এই বিষয়টি অস্বীকার করেছেন, তিনি বলেন, 'এটা কোনো বাণিজ্য মেলা নয়, তাই ডায়াপার বা কোনো পণ্য চাইলেই বিক্রি করা যায় না। তাই আমরা স্পন্সরকে বলেছি, বইমেলায় তাদের পণ্য বিক্রি না করতে। বইমেলার নীতি অনুযায়ী মেলায় বই ও খাবার ছাড়া অন্য কিছু বিক্রির সুযোগ নেই।'
নারী ও শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্যের ব্র্যান্ড 'স্টে সেইফ' বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দুটি স্টল পরিচালনা করে আসছিল। মেলার শুরু থেকেই তারা স্টল চালিয়ে আসছে। তবে বাংলা একাডেমিতে এনিয়ে অভিযোগ আসার পর প্রাণ-আরএফএলকে একটি চিঠি দেওয়া হয়।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা— ড্রিমার ডাংকি প্রাইভেট লিমিটেড চিঠিতে জানায়, 'বেশকিছু ইসলামিস্ট গ্রুপ ন্যাপকিনকে গোপন পণ্য বলে আখ্যা দেয়, এবং এর প্রকাশ্য প্রদর্শনী বা বিক্রি বন্ধে দাবী জানায়। এরপর বাংলা একাডেমি স্টলে রাখা এসব পণ্যকে শিশু শিক্ষা সরঞ্জামের মতো অন্য পণ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে বলেছে।
ড্রিমার ডাংকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান রাজ প্রাণ-আরএফএলকে এই চিঠি দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি এসব ব্যক্তি স্টে সেইফের স্টল দুটিতে গিয়ে এসব পণ্য প্রদর্শনীতে না রাখার দাবি জানায়। পরের দিন আরো অনেক মানুষ প্রায় একই দাবি নিয়ে হাজির হয়।
'পরে বাংলা একাডেমি, পুলিশ, আনসারসহ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভলান্টিয়ারদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি ঠান্ডা করা হয়। গতকাল ১৩ই ফেব্রুয়ারি স্টল দুটি খুলে দিলে কিছু গ্রুপ সরাসরি এসে বাংলা একাডেমিতে অভিযোগ করে। এদেশে এই মুহূর্তে বিভিন্ন জায়গায় মব হচ্ছে—- বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে। এধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য উক্ত স্টল দুটি বন্ধ করা অত্যাবশাকীয়। আপনাদের ব্যবসায়িক স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে স্টল দুটি অন্য পণ্য (যেমন শিশু শিক্ষা সরঞ্জাম) দিয়ে প্রতিস্থাপনের অনুমতি দেয়া যেতে পারে আলোচনা সাপেক্ষে।'
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাকিব হাসান টিবিএসকে বলেন, এবিষয়ে জানতে চাইলে টিবিএসকে রাকিব বলেন, 'এ ধরনের চিঠি দেওয়ার কর্তৃত্ব আমাদের নেই। তবে বাংলা একাডেমি আমাদের চিঠিটি লিখতে বলে, আমরা তাই করি।'
বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি করা হচ্ছিল এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাকিব বলেন, 'স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি করা হচ্ছিল না। পণ্যগুলো স্যাম্পল হিসেবে দেওয়া হতো, বিক্রি করা হতো না।'
এবিষয়ে প্রাণ-আরএফএলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক তৌহিদুজ্জামান গণমাধ্যমকে চিঠিটি পাওয়ার কথা জানিয়ে পণ্য বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'স্টল থেকে স্টে সেইফ স্যানিটারি ন্যাপকিন সরিয়ে নেওয়ার দাবি ওঠে। এসব পণ্যের প্রদর্শনী নিয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হোক— আমরা তা চাইনি। মেলায় অনেক নারী আসেন, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই এসব পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছিল।'
এদিকে মেলা থেকে নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পণ্য সরিয়ে নেওয়ার এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের মতো পণ্য নিয়ে মেলা কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা।