২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে শতভাগ রপ্তানিনির্ভর কারখানা করছে আরএএফএল

বিশ্ববাজারে অবস্থান শক্তিশালী করতে শতভাগ রপ্তানিনির্ভর প্লাস্টিক কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। গাজীপুরের কালীগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ২০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে এ কারখানা বানাচ্ছে কোম্পানিটি।
কারখানার যন্ত্রপাতি স্থাপনে চীনের হাইতিয়ান গ্রুপের সঙ্গে শিল্পগোষ্ঠীটি একটি চুক্তি করবে বলে জানিয়েছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল।
তিনি বলেন, রপ্তানিনির্ভর গৃহস্থালি প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদনে চীন থেকে যন্ত্রপাতি আনার জন্য হাইতিয়ানের সঙ্গে একটি বড় চুক্তি হতে যাচ্ছে। এ চুক্তির আওয়তায় তারা আগামী তিন মাসের মধ্যে যন্ত্রপাতি স্থাপন ও অবকাঠামো শেষ করবে।
কামরুজ্জামান আরও বলেন, 'আমাদের হাতে এরই মধ্যে কিছু রপ্তানি আদেশ রয়েছে। এর জন্যই আমরা দ্রুত উৎপাদন শুরু করতে চাই। যন্ত্রপাতি স্থাপন শেষে আগামী জুন থেকে উৎপাদন শুরু করতে পারব বলে আমাদের বিশ্বাস।'
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন কারখানা স্থাপন হলে এখান থেকে বছরে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করতে পারবে কোম্পানিটি। নতুন কর্মসংস্থান হবে ২ হাজার ৫০০ মানুষের। এটি হলে কোম্পানিটির রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে ৩০ শতাংশের বেশি।
আরএফএল ডিউরেবল প্লাস্টিকের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) সালাহ উদ্দিন শিকদার বলেন, আরএফএলের পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় ভারতে। এরপর রয়েছে জার্মানি, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
'এসব দেশে আমাদের গৃহস্থালি প্লাস্টিক, বাইসাইকেল, মেলামাইন, গৃহনির্মাণ সামগ্রী, পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, নন-লেদার ফুটওয়্যার ও প্লাস্টিক ফার্নিচারের বিপুল চাহিদা রয়েছে,' বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, 'আমাদের নতুন গন্তব্য ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর আমেরিকা। সেখানে বিভিন্ন ডিজাইনের কনটেইনার, খেলনা, টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যারের ডিমান্ড রয়েছে। এরই মধ্যে আমেরিকার একটি কোম্পানি ৬ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার দিয়েছে। আরও কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।'
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহার ১৫০ কেজি। চীন এখন এই বাজার দখলে রেখেছে। 'তবে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমাদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। ওয়ান-টাইম ও পিইটি প্রোডাক্ট রপ্তানির বড় সম্ভাবনা রয়েছে।'
২০০৭ সালে ভারতে গৃহস্থালি প্লাস্টিক পণ্য পাঠানোর মাধ্যমে আরএফএল রপ্তানি শুরু করে। বর্তমানে ৮০টি দেশে ৩০ ক্যাটাগরিতে ৫০০ পণ্য রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে কোম্পানিটির।
শতভাগ রপ্তানি ইউনিট স্থাপনের কারণ জানাতে গিয়ে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'বিদেশি ক্রেতাদের অনেক চাহিদা থাকে। তাদের কমপ্লায়েন্সের মধ্যে নিরাপত্তা, শ্রম ইস্যুসহ অনেক কিছু মানতে হয়। এতে উৎপাদন খরচও বেশি হয়। ফলে শতভাগ রপ্তানিনির্ভর কারখানার ক্ষেত্রেও সরকারও কিছু প্রণোদনা দিয়ে থাকে।
'আমাদের নতুন কারখানাটি এ উদ্দেশ্যেই তৈরি। এখানকার কোনো পণ্য স্থানীয় বাজারে পাওয়া যাবে না।'
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্টের ওয়ালমার্ট, কানাডার ডোলারামা ও লবলজ, ফ্রান্সের ক্যারিফোর, জার্মানির লিডল, অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট, কোরিয়ার লোকসি এবং যুক্তরাজ্যের উলওয়র্থস ও আর্গস-এর মতো সুপারশপগুলোতে আরএফএলের পণ্য পাওয়া যায়।
এসব ক্রেতাদের চাহিদার কারণেই স্বতন্ত্র ইউনিট করতে হচ্ছে বলে জানান কামরুজ্জামান।