ইজতেমা: প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত কাল, মধ্যরাত থেকে বন্ধ থাকবে গণপরিবহন

তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজামের অনুসারীদের আয়োজনে ৫৮তম বিশ্ব-ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপের আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯-৯:৩০টার মধ্যে এ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ফলে ইজতেমা এলাকায় ময়দানের চারপাশে শনিবার মধ্যরাত থেকেই গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
আজ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. মো: নাজমুল করিম খান। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গাজীপুর মহানগর পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সামনে ব্রিফিংকালে এসব কথা জানান তিনি।
জিএমপি কমিশনার বলেন, "আগামীকালের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।"
তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরব্বি, কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবায়ের আহমেদ মোনাজাত পরিচালনা করবেন।
জিএমপি কমিশনার আরও বলেন, "আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে শনিবার রাত ১২টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে আদুল্লাহপুর, টঙ্গী থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত এবং আব্দুল্লাহপুর-নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আব্দুল্লাপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত সড়কে আখেরি মোনাজাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।"
এছাড়া, টঙ্গী-কামারপাড়া রোড, টঙ্গী থেকে কালীগঞ্জ সড়কেও যান চলাচল বন্ধ থাকবে। ইজতেমা ময়দানের মুসল্লিরা ময়দান ত্যাগ করার পর সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে জিএমপি কমিশনার বলেন, "ময়মনসিংহ ও গাজীপুরগামী যানবাহনগুলোকে গাবতলী দিয়ে কোনাবাড়ী হয়ে এবং ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে ভোগড়া বাইপাস থেকে ৩০০ ফিট রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এ সময় এসব সড়ক হয়ে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি বা যান চলতে দেওয়া হবে না। তবে ইজতেমা সংশ্লিষ্ট সব ধরনের যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।"
বিশ্ব ইজতেমায় এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার নিরাপত্তার শঙ্কাবোধ করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, "আমরা মুসল্লিদের সম্পূর্ণভাবে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। ইজতেমা কর্তৃপক্ষ বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিয়েছে। তারাও নিরাপত্তার দিকটি দেখছেন। কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে আমাদের নজর আছে। আশা রাখি, কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে না।"
প্রেস ব্রিফিংকালে গাজীপুর মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ছাড়াও শুরায়ে নেজামের মুরুব্বী প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, ইজতেমার সার্বিক বিষয় সমন্বয় ও দেখাশুনার জন্য ময়দানে উপস্থিত রয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন।
এদিকে, আখেরী মোনাজাতে অংশগ্রহণকারী ও ইজতেমা শেষে বাড়ি ফেরা মুসুল্লিদের যাতায়াত সুবিধার জন্য ৯টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেলওয়ে বিভাগ।
একইসঙ্গে রাখা হয়েছে বাড়তি বাসের ব্যবস্থা। বনলতা, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সুবর্ণলতা, পর্যটক এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এই পাঁচটি বিশেষ ট্রেন ব্যতীত টঙ্গি স্টেশনে সকল ট্রেনের যাত্রাবিরতি রাখা হয়েছে।
সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবারের বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশ তাবলিগ জামাত শুরায়ে নেজামের অধীনে ৩১ জানুয়ারি শুরু হওয়া প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে।
৮ দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব প্রশাসনের কাছে ময়দান বুঝিয়ে দেবেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা।
আখেরি মোনাজাত শেষে দ্বীনের দাওয়াতে বের হবেন দেশ-বিদেশের তাবলীগ জামাতের সাথী ও মুসল্লিরা।