‘সুইং স্টেট’র ভোটাররা যেভাবে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে

ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি কমলা হ্যারিস, কে হচ্ছেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট? এটি নির্ধারিত হতে পারে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফলাফলে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। জনমত জরিপ অনুযায়ী, ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সাতটিতে দুজনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এগুলো হলো 'সুইং স্টেট'।
যুক্তরাষ্ট্রে কিছু অঙ্গরাজ্য রয়েছে যেগুলো সাধারণত ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করে। আর কিছু রয়েছে রিপাবলিকানদের। কিন্তু কিছু রয়েছে, যেগুলো কখনো ডেমোক্র্যাট কিংবা কখনো রিপাবলিকানদের সমর্থন করে। এগুলোকেই বলা হয় সুইং স্টেট।
সাতটি সুইং স্টেটের মধ্যে রয়েছে অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত এ অঙ্গরাজ্যেই হোয়াইট হাউসের দৌড়ে বিজয়ী নির্ধারণ করে দিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে।
প্রেসিডেন্ট কেন জনগণের ভোটে (পপুলার ভোট) নির্বাচিত হন না?
যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের প্রার্থীদের মতো সরাসরি জনগণের ভোটে (পপুলার ভোট) প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় না। জনগণ প্রথমে তাদের পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচকমণ্ডলী নির্বাচিত করেন। এ নির্বাচকমণ্ডলীকে বলা হয় 'ইলেক্টোরাল কলেজ'। এই নির্বাচকমণ্ডলী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কাজটি করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটসংখ্যা ৫৩৮। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজের ভোট পেতে হয়। তবে প্রার্থীদের ভোটের সংখ্যা সমান সমান হলে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের প্রতিনিধিরা নির্ধারণ করেন কে হবেন তাদের প্রেসিডেন্ট।
বিশ্লেষকদের ধারণা- যদি সুইং স্টেট ছাড়া অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোট পড়ে, তাহলে হ্যারিস পাবেন ২২৬টি ইলেক্টোরাল ভোট ও ট্রাম্প পাবেন ২১৯টি। বাকি ৯৩টি ভোট এখনও অমীমাংসিত থাকবে। বাকি থাকছে ৯৩টি। এ কয়টির মধ্যে কার ভাগ্যে কতটি জুটছে, সেটিই দেখার বিষয়।
যে রাজ্যগুলো ব্যবধান গড়ে দিতে পারে
মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন এক প্রজন্ম ধরে ডেমোক্র্যাটদের শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল বলা চলে। কিন্তু ২০১৬ সালে ট্রাম্প এসব অঙ্গরাজ্যে জয়ী হয়ে তাক লাগিয়ে দেন। যদিও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে খুব সামান্য ব্যবধানেই জিতেছিলেন তিনি।
তবে এর চার বছর পর এ তিনটি রাজ্যে জয়ী হন ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন। এছাড়াও ঐতিহ্যগতভাবে রিপাবলিকানদের শক্ত অবস্থান হিসেবে পরিচিত জর্জিয়া ও অ্যারিজোনায়ও চমক দেখান তিনি।
নিউইয়র্ক টাইমসের গত ১৬ অক্টোবরের এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, এই সাতটি অঙ্গরাজ্যে হ্যারিস ও ট্রাম্পের ব্যবধান খুব সামান্যই। কেবল অ্যারিজোনায় হ্যারিসের চেয়ে মাত্র দুই পয়েন্ট এগিয়ে ট্রাম্প। অন্য ছয়টি অঙ্গরাজ্যে দুজনের পয়েন্ট ব্যবধান একের মধ্যেই।
২০২০ সালের নির্বাচনে ওই তিনটি অঙ্গরাজ্যে বাইডেনের চেয়ে মাত্র ৪৩ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের মোট ভোটার হিসাবে যা মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। অর্থাৎ এই এক তৃতীয়াংশের সমর্থন পেলে হয়ত দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হতেন ট্রাম্প। তাই এবারের নির্বাচনকে ২০২০ সালের নির্বাচনের চেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে হচ্ছে।
পেনসিলভানিয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ
এর সহজ উত্তর হলো অন্য ছয়টি অঙ্গরাজ্যের চেয়ে এখানে ইলেক্টোরাল ভোট বেশি, ১৯টি।
পেনসিলভানিয়া হ্যারিস ও ট্রাম্প দুজনের জন্যই জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এ অঙ্গরাজ্য দুজনের যে কাউকেই ২৬৯টি ইলেক্টোরাল ভোট ছাড়িয়ে যাওয়ার পথ খুলে দিতে পারে।
যদি হ্যারিস পেনসিলভানিয়া হারান, তবে তাকে নির্বাচিত হতে নর্থ ক্যারোলাই বা জর্জিয়ার মধ্যে যেকোনো একটি জিততেই হবে। এ অঙ্গরাজ্য দুটি গত চার দশকের মধ্যে মাত্র তিনবার ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোট দিয়েছিল।
অন্যদিকে যদি ট্রাম্প পেনসিলভানিয়া হারান, তবে তাকে উইসকনসিন বা মিশিগান অবশ্যই জিততে হবে, যেগুলো কি না ১৯৮০-এর দশক থেকে মাত্র একবার রিপাবলিকানদের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। আর সেটিও ট্রাম্পের জন্যই, আট বছর আগে।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক