ঈদের আগে জমে উঠেছে গো-খাদ্যের বাজার, বেড়েছে পশু কোরবানির সরঞ্জাম বিক্রি

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর খাবারসহ কোরবানির আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম বিক্রি।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে মিলছে খড়, ভুসি, ঘাস ইত্যাদি পশুর খাবারসহ মাংস কাটার খাট্টা ও পাটি। সারা বছর অন্য কাজ করলেও ঈদের আগের ২-৩দিন এসব সরঞ্জামের ব্যবসা করেন কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী।
একইসঙ্গে, গোশত কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রিও বেড়েছে। কামারদের দা, বটি, ছুরি, চাপাতি বানাতে ও ধার দিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।
কল্যাণপুরের বিক্রেতা আসাদুল ইসমলাম জানান, ৫ বছর হলো এই মৌসুমী ব্যবসা করছেন তিনি। এমনি সময় সবজি বিক্রি করেন। আর ঈদের দিনে যারা কোরবানি দেন, তাদের পশুর মাংস কাটাকাটি করেন।
এবার মানিকগঞ্জ থেকে ৪০,০০০ টাকার ঘাস কিনেছেন। ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন।
নড়াইল থেকে তেঁতুল কাঠের খাটিয়া এনেছেন দুলু শেখ। পশুর মাংস কাটার ছোট আকারের খাটিয়াগুলো ২৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন তিনি।
দুলু শেখ বলেন, "এত দাম দিয়ে গরু কিনে কোরবানির জন্য, কিন্তু একটা খাটিয়া কিনতে এসে ক্রেতারা অনেক দামাদামি করেন।"
কারওয়ানা বাজার,কল্যাণপুর বাস স্টপজের কাছে ও মগবাজার এলাকা ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির পশু জবেহের পর পর মাংস রাখার জন্য মাঝারি আকারের হোগলা বা পাটি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে; আর বড় পাটি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, প্রতিকেজি গমের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ডালের ভুসি ৭০ টাকা এবং ধানের কুড়া ২০ টাকা কেজি।
এছাড়া, প্রতি আটি খড় ৩০ টাকা, প্রতি আটি ঘাস ২০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁঠাল পাতার আটি ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাংস কাটার জন্য ছোট আকারের গাছের গুড়ি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় এবং বড়টি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে।
রাজধানীবাসী কোরবানির পশু কিনতে শুরু করায় গো-খাদ্যের বিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা মাহমুদ। তিনি বলেন, "শনিবার প্রায় ১০,০০০ টাকার বিক্রি হয়েছে।" পরেরদিন আরও বেশি বিক্রি হওয়ার আশা করছেন তিনি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ।
কোরবানির সরঞ্জাম
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রেললাইন সংলগ্ন কামারপট্টি ও কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়– সেখানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কোরবানির পশু কাটার বিভিন্ন আকারের চাপাতি, দা, বটি, ছুরি ও কুড়াল।
কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া হার্ডওয়ারের বিক্রেতা মঞ্জুর হোসেন বলেন, "এক কেজি ওজনের ভালোমানের লোহার চাপাতি, দা- এর দাম ১০,০০০ টাকা। আর নিম্নমানের লোহা দিয়ে বানানো দা, চাপাতি, বটির দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।"
এছাড়া আকার ভেদে পশু জবেহ দেওয়ার ছুরির দাম ২০০ থেকে শুরু করে ৮০০ টাকা পর্যন্ত বলে জানান তিনি।
মিউনিসিপ্যাল কর্মকার মার্কেটের সভাপতি মোহম্মদ হারুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মিউনিসিপ্যাল কর্মকার মার্কেটে স্থায়ীভাবে ১২টি দোকান আছে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে প্রায় এক সপ্তাহ তাদের ১২টি দোকানে প্রতিদিন ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা বিক্রি হয়। তবে ঈদ শেষ হয়ে গেলে তাদের পণ্যর চাহিদা কমে যায়।
তিনি জানান— কাঁচা লোহার দাম গত এক বছরে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের লোহার দাম ছিল ৮০ টাকা কেজি, সেটি এখন হয়েছে ১৭০ টাকা কেজি। এছাড়া, কাঁচা লোহা ৫৫ টাকা কেজি ছিল, যেটি এখন হয়েছে ১০০ টাকা কেজি। এর ফলে লাভ কমে গেছে।