‘আইনী জটিলতায়’ বিআইপিডির ১.০৮ কোটি টাকা ফেরত দিতে পারছে না ফারইস্ট ফাইন্যান্স

প্রায় ৬ বছর ধরে দেশের আর্থিক খাতের শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইপিডি)- এর ১.০৮ কোটি টাকা আমানতের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
কেবল মূল টাকা নয়, আমানতের ওপর পাওনা মুনাফাও পাচ্ছে না বিআইপিডি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থমন্ত্রণালয়, এনবিআর– এমনকি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বরাবর একাধিকবার চিঠি দিয়েও কোনো সমাধান পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে, সমস্যাটি সম্পর্কে ফারইস্ট ফাইন্যান্স কর্তৃপক্ষ টিবিএসকে জানিয়েছে, আইনি জটিলতার কারণে তারা বিআইপিডি আমানত ফেরত দিতে পারছে না।
বিআইপিডি'র মহাপরিচালক মোরতুজা আলী টিবিএসকে বলেন, "বিআইপিডি ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে ছয়টি এফডিআর অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। সবকটি এফডিআর বিভিন্ন তারিখে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ফারইস্ট ফাইন্যান্স কোনো অর্থই পরিশোধ করছে না। এমনকি, পত্রের জবাবও দিচ্ছে না।"
মর্তুজা আলী টিবিএসকে জানান, তারা এখন পর্যন্ত ফারইস্ট ফাইন্যান্সকে ৩৪টি চিঠি ও ই-মেইল পাঠিয়েছেন, কিন্তু কোনো উত্তর পাননি।
তিনি বলেন, "ফারইস্ট ফাইন্যান্সের অন্যায় ও অযৌক্তিক কর্মকাণ্ডের ফলে বিআইপিডির মতো একটি সম্ভাবনাময় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।"
"আমাদের প্রায় ১.০৮ কোটি টাকার ছয় মাস মেয়াদী ডিপোজিট ছিল। প্রথম দিকে ডিপোজিটের প্রফিট দেওয়া হলেও ২০১৮ সাল থেকে আর দিচ্ছে না, এছাড়া পুনরায় রিনিউও করা হচ্ছে না," যোগ করেন তিনি।
মর্তুজা আলী আরও বলেন, "অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড কর্তৃক বিআইপিডির অর্থ পরিশোধ না করার বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পত্র প্রদান করা হয়। তবুও বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি," যোগ করেন তিনি।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের মার্চ শেষে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪০ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ রয়েছে ৮৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট ঋণের ৯৪.২৫ শতাংশ খেলাপি।
এছাড়া, ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ হালনাগাদকৃত কোয়ার্টারলি ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টসে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আলী জারিয়াব টিবিএসকে বলেন, "আমরা বিআইপিডির ডিপোজিটের অর্থ আইনি জটিলতা থাকার কারণে ফেরত দিতে পারছি না।"
তিনি বলেন, "বিআইপিডি'র কয়েকজন পরিচালকের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ থাকায় এনবিআর থেকে তাদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার কথা বলেছে। যেহেতু ওই সকল ব্যক্তির সঙ্গে বিআইপিডির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট রয়েছে, যার কারণে আমরা আইনি জটিলতায় ডিপোজিটের অর্থ পরিশোধ করতে পারছি না।"
চিঠির উত্তর না দেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে মুহাম্মদ আলী জারিয়াব বলেন, "এ বিষয়ে বিআইপিডি একাধিক রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়েছে। তাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাছে রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান জানতে চাইলে আমরা চিঠির জবাব দিয়েছি।"
এ বিষয়ে বিআইপিডি'র মহাপরিচালক মোরতুজা আলী বলেন, "আমাদের প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর একটি অডিট ফার্ম থেকে করা হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে নির্ধারিত পরিমাণে অর্থ না দেওয়ার কারণে তাদেরকে অর শেয়ারহোল্ডার রাখা হয়নি।"
"যাদেরকে শেয়ারহোল্ডারে রাখা হয়নি, তাদের কয়েকজনের বিষয়ে এনবিআরের এনটি নির্দেশনায় তাদের ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে বলা হয়। এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানিক কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও ফারইস্ট ফাইন্যান্স আমাদের ডিপোজিটের অর্থ ফেরত দিচ্ছে না," যোগ করেন তিনি।