ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঠেকাতে নতুন রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করা হবে: সালমান এফ রহমান

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, অগ্নিঝুঁকি প্রতিরোধে অবকাঠামো নির্মাণে শৃঙ্খলা আনতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড আইন অনুযায়ী নতুন রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড আইন অনুযায়ী একটা রেগুলেটরি অথরিটি তৈরি করা হবে। সেটা তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা করব। সেটা হয়ে গেলে এই যে আগুন লাগার প্রিভেনটিভ কাজগুলো রেগুলেটরি অথরটির মাধ্যমে আমরা করব।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) নবম ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, একবার এটি হয়ে গেলে, আমরা এই কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অগ্নি প্রতিরোধের কাজ করতে পারি।
এর আগে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছিল সরকার। এই বিধি মেনে ঢাকাসহ সারা দেশে ভবন নির্মাণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিধি অনুযায়ী, দেশব্যাপী বিল্ডিং কোড প্রয়োগ, বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য সরকার বাংলাদেশ ইমারত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বাংলাদেশে বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি (বিবিআরএ) নামে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই কর্তৃপক্ষ বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে।
পাঁচ সদস্যের এই কর্তৃপক্ষে একজন পরিকল্পনাবিদ, একজন স্থপতি, একজন পুরকৌশলী, একজন আইনবিদ এবং একজন আমলা থাকবেন।
সদস্যদের কমপক্ষে ৩০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে। সরকার সদস্যদের তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেবে। তাদের একজনকে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান করা হবে।
সালমান এফ রহমান আশা প্রকাশ করেন, বিবিআরএ'র তত্ত্বাবধানে সব ডিজাইন অনুমোদন এবং ভবন নির্মাণ কাজ তদারকি করা হলে বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, 'আগুন লাগার আগে আমাদের অনেকগুলো ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে আগুন না লাগে এর জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে আমাদের অনেক কাজ করা হচ্ছে। আমি একটি কমিটির সভাপতি সেখানে ছোট -মাঝারি বাণিজ্যিক ও শিল্প কারখানা পরিদর্শন করেছি। আগুন লাগার মূল কারণ ইলেকট্রিকাল শর্ট সার্কিট। আমরা দেখেছি আমাদের ইলেকট্রিক তার হিসেবে যেটা ব্যবহার করা হয় তার মান ভালো না। সেটা স্ট্যান্ডার্ড করা হয় তার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।'
তিনি আরও বলেন, 'আরেকটা কারণ হলো কাঠামোগত ত্রুটি। যে ত্রুটির জন্য রানা প্লাজায় বিল্ডিং কলাপস করে। সেখানে স্ট্রাকচারাল প্লানিংটা পাশ হয় নি। এসব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি।'
সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড আইন অনুযায়ী একটা রেগুলেটরি অথরিটি তৈরি হয়ে গেলে এই প্রিভেনটিভ কাজগুলো রেগুলেটরি অথরটির মাধ্যমে আমরা করতে পারব।
জানা গেছে, দেশের শিল্প-কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানকে সভাপতি করে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এর নেতৃত্বে ইতোমধ্যে সারাদেশে ১০ হাজার কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করতে এবং যৌথ উদ্যোগে অগ্নি সুরক্ষা ও নিরাপত্তা শিল্প জোরদারে সরকারি ও বেসরকারি খাতকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, কিছু ঘটনার পর অবকাঠামো নির্মাণে মানুষের মধ্যে সতর্কতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অগ্নি সুরক্ষা ও অগ্নি নিরাপত্তার বাজার দ্রুত বিস্তৃত হয়েছে।
অগ্নিদুর্ঘটনা কমাতে কাঠামোগত পরিকল্পনা তুলে ধরে সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এখন বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ শিল্প। আমাদের ভবন, অবকাঠামো ও শিল্পকারখানায় যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, সবুজ শিল্পায়ন বৃদ্ধি এবং কারখানার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি অপরিহার্য বিষয়।
ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব) ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নবম আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো-২০২৪ আয়োজন করে।
এই এক্সপোতে বিশ্বের ৩০টি দেশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। তারা তাদের ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির অত্যাধুনিক পণ্য ও প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে।
প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ইসাব সভাপতি মো. নিয়াজ আলী চিশতী উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি এ খাতের সম্প্রসারণে নীতি সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতি সম্প্রসারণে অগ্নি সুরক্ষা ও অগ্নি নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে একটি সমন্বিত নীতি সহায়তা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, টেকসই উন্নয়ন এবং এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, অগ্নি সুরক্ষা ও নিরাপত্তা কমপ্লায়েন্স জোরদার করার ফলে তৈরি পোশাক খাতে ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
নিয়াজ আলী চিশতী বলেন, আমদানি পর্যায়ে এনওসি ও সার্টিফিকেট প্রদানকারী বিএসটিআই ও অন্যান্য অংশীজনদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে এবং নিম্নমানের পণ্য নিয়ন্ত্রণে যাচাই-বাছাই জোরদার করার ওপর সরকারের জোর দেওয়া উচিত।