একই ব্যক্তি ‘বিরতি দিয়ে’ তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন- এমন সুযোগ রাখার প্রস্তাব বিএনপির

প্রধানমন্ত্রী পদে টানা দুই মেয়াদের বেশি কেউ থাকতে পারবেন না, এমন বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়েছে বিএনপি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে দলটি প্রস্তাব করেছে, প্রধানমন্ত্রী পদে টানা দুই মেয়াদের বেশি কেউ থাকতে না পারলেও একবার বিরতি দিয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলে, সেই সুযোগ থাকতে হবে।
আজ রোববার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে কমিশনের সঙ্গে সংলাপের পর সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। আগামী মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) আবার বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে।
বিএনপি ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির পক্ষে মত দিয়েছে। দলটি বলেছে, এর জন্য সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের পর আরেকটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হবে পরবর্তী সময়ে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে। আর রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয়কক্ষের সদস্যদের ভোটেই নির্বাচিত হবেন।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী 'ইলেক্টোরাল কলেজে'র মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও ভিন্নমত জানিয়েছে বিএনপি।
এর আগে আজ দুপুরে সংলাপে বিরতি চলাকালে সালাহউদ্দিন বলেন, একই ব্যক্তি টানা দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করে একবার বিরতি দিয়ে আবারও দায়িত্বে আসতে পারবেন- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাব 'নট মোর টু কনজিকিউটিভ টার্ম', অর্থাৎ পরপর দুবারের বেশি কেউ থাকতে পারবেন না। তবে ভবিষ্যতে জনগণ চাইলে এবং দলের সিদ্ধান্তে একবার বিরতির পর একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রাখতে চান তারা।
একই ব্যক্তি সরকারপ্রধান, দলপ্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না- ঐকমত্য কমিশন এই প্রস্তাবে বিএনপি একমত নয় বলেও জানিয়েছেন সালাউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি উন্মুক্ত রাখতে প্রস্তাব দিয়েছি।
তিনি বলেন, একই ব্যক্তি সরকারপ্রধান ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না- এমন চর্চা আমরা দেখি না। যুক্তরাজ্যেও আমরা দেখি, পার্টি প্রধানকে সরকারপ্রধান। এটি গণতান্ত্রিক চর্চা। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রচলন হয় এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রচলন করা যায়, তাহলে সেই ভোটে যারা ক্ষমতায় আসবে, মনে করতে হবে জনগণ তাদের সেই ক্ষমতা দিয়েছে।
বিএনপি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব করেছে জানিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, সেখানে ধর্মনিরপেক্ষ বা বহুত্ববাদ কোনোটাই নেই। তবে কমিশন তাদের প্রস্তাবে- স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে থাকা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা যুক্ত করতে বলেছে। আমরা সেখানে একমত হয়েছি।
সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধান জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে ইন্টারনেট প্রাপ্তির বিষয়ে একমত বিএনপি। তবে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হয় রাষ্ট্রকে। মৌলিক অধিকারের বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়টিও দেখতে হবে। তাই আমরা বলেছি, সংবিধানের অনেকগুলো বিষয় যুক্ত না করে, যা রাষ্ট্র বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে তাই করতে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বেশকিছু বিষয়ে আমরা কাছাকাছি এসেছি। কিছু কিছু বিষয়ে তাদের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছি। গণতন্ত্রে মত-দ্বিমত থাকাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা বাকশালে বিশ্বাস করি না। যেখানে এমন কিছু করা হয়, যাতে সবাই একমত হতে হয়।
তিনি আরও বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থ চিন্তা করে যা সঙ্গত ও উত্তম তেমন কিছুই হওয়ায় উচিত।