হামিংবার্ড এমন রঙ দেখে যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না

ছোট্ট হামিংবার্ডের রঙিন পালকের নান্দনিক সৌন্দর্য আমাদের বরাবরই বিমোহিত করে। কিন্তু আমরা জানলে অবাক হয়ে যাবো, মানুষের পক্ষে প্রকৃতির যে রঙগুলো শনাক্ত করা সম্ভব না, সেই রঙগুলোই ধরা পড়ে হামিংবার্ডের চোখে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা এমন তথ্যই দিচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই জানেন, পাখির কালার ভিশন মানুষের চেয়ে বেশি। প্রাইমেট গোত্রের অন্যান্য প্রাণীর মতো মানুষও ট্রাইকোমেট্রিক। অর্থাৎ, আমাদের চোখের মধ্যে তিন ধরণের রঙ সংবেদনশীল রিসেপ্টর বা কোন রয়েছে। এগুলো হল নীল, সবুজ এবং লাল। কিন্তু পাখিদের রয়েছে চারটি কালার কোন, অর্থাৎ তারা টেট্রাক্রোমেটিক।
আমাদের তিনটি কালার কোন দিয়ে আমরা রংধনুর সাত রঙ দেখতে পারি। এগুলো হল লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, আকাশী এবং বেগুনি। বর্ণালীর এই সাত রঙের বাইরে একটি নন-স্পেক্ট্রাল কালার আমরা দেখি, সেটি হলো পার্পেল। এই রঙ থেকে আলো এসে আমাদের চোখের লাল এবং নীল কোনকে উদ্দীপিত করে বলে আমরা এই রঙটিও দেখি।

পাখিদের চারটি কালার কোনের কারণে তাত্ত্বিকভাবে তারা মানুষের চেয়ে বেশি রঙ সনাক্ত করতে পারে। এরমধ্যে রয়েছে অতিবেগুনি বর্ণালী যার ভেতরে রয়েছে আল্ট্রাভালোলেট-গ্রীন এবং আল্ট্রাভায়োলেট-রেড এর মতো রঙগুলো। তবে পাখিরা প্রকৃতপক্ষে কী কী রঙ দেখতে পারে তা নিয়ে গবেষণা হয়েছে সামান্যই।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভোলিউশনারি বায়োলজিস্ট মেরি স্টোডার্ড এবং তার এক সহকর্মী মিলে কলোরাডোর রকি মাউন্টেন বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরির কাছে হামিংবার্ডের ওপর এই গবেষণা চালান। চলতি সপ্তাহেই তাদের এই গবেষণাপত্র ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
স্টোডার্ড বলেন, "ওদেরকে এই কাজটি (রঙ যাচাই) করতে নিজের চোখে দেখা আমার জীবনের সবচেয়ে দারুণ একটি ঘটনা।"
ট্রেভর প্রাইস নামে আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ইভোলিউশনারি বায়োলজিস্ট বলেন, পাখিরা কিভাবে রঙকে আলাদা করে চেনে সে বিষয়টি এই গবেষণায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরা হয়েছে যা একটি 'বড় পদক্ষেপ'।

তিনি বলেন, "প্রাণীদের কালার ভিশন নিয়ে আমাদের বোঝাপড়ার বিষটির সূচনা হলো এর মাধ্যমে।"
২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনটি মৌসুমে ১৯ টি পরীক্ষা চালান এই বিজ্ঞানীরা। তাদের বানানো ফিডারে এসময় প্রায় ৬ হাজার হামিংবার্ড আসে। ওই সময় তারা দেখেন বর্ণালি এবং অবর্ণালী রঙ নির্বিশেষে পাখিরা মিষ্টি স্বাদের ফিডারে এসেই বসে।
স্টোডার্ড বলেন, "এই রঙগুলোকে যখন আমাদের চোখে একইরকম দেখাচ্ছিল তখনো পাখিগুলো ইউভি-সবুজ রঙের ফিডারে বসবে নাকি শুধু সবুজ রঙের ফিডারে বসবে তা নির্ধারণ করতে পারতো।"