খুলনা মেডিকেলের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার

ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) দুপুর ৩টার দিকে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. সাইফুল ইসলাম অন্তর এ ঘোষণ দেন।
সাইফুল বলেন, 'খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ও খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এসে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখে গেছেন। সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে। তাই রোগীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আমরা সাময়িকভাবে ধর্মঘট কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছি।তবে শনিবারের মধ্যে সব আসামি গ্রেফতার ও আমাদের অন্যান্য দাবি পূরণের কোনো অগ্রগতি না হলে পুনরায় ধর্মঘট কর্মসূচি ডাকা হবে।'
সোমবার রাত ৯টার দিকে ওষুধ কেনাকে কেন্দ্র করে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খুলনা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী ও ৯ ওষুধ ব্যবসায়ী আহত হন। এর মধ্যে তিন শিক্ষার্থীর অবস্থা ছিল গুরুতর।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে কর্মবিরতি শুরু করেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে হাসপাতালের সামনের ওষুধ ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রাখেন।
আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় বুধবার সকালে মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ এবং হাসপাতালের পরিচালক ও উপপরিচালকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে মেডিকেল কলেজ চত্বরে দিনভর বিক্ষোভ করেন। ওই বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেন তাদের তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়া হলে বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বেলা ১২টা থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি ছিল: ১৬ আগস্ট সকাল ১০টার মধ্যে হামলার সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করা, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালের মাল্টিপারপাস ভবনে কমপক্ষে দুটি মডেল ফার্মাসি স্থাপন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা। এরমধ্যে দ্বিতীয় দাবিটি গতকাল দুপুরে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন হাসপাতালের পরিচালক মো. রবিউল ইসলাম।
ওই সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, হাসপাতালের সামনের বিপ্লব মেডিসিন কর্নার নামের একটি দোকানে ওষুধ কিনতে যান প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী। কিন্তু ওই দোকান থেকে ওষুধটির দ্বিগুণ দাম চাওয়া হয়। এটা নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন দোকানের কর্মচারীরা। পরে ওই শিক্ষার্থী হোস্টেলে এসে অন্যদের ব্যাপারটি জানান। কয়েকজন শিক্ষার্থী কেন ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে, তা জানতে দোকানে গেলে আগে থেকে ওত পেতে থাকা অন্য ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়ে ব্যাপক মারধর করেন। এতে তাদের বিভিন্ন বর্ষের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও ২৯ ব্যাচের আনান, ৩১ ব্যাচের মাহাদি ও দেব চৌধুরীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাদের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। তবে তারা এখন শঙ্কামুক্ত।
অন্যদিকে ওষুধ ব্যবসায়ীদের দাবি, ওই শিক্ষার্থী ৭০ টাকার ওষুধ কেনার পর তিনি মোট দামের ওপর ১০ শতাংশ কমিশন চেয়েছিলেন। তবে দোকানদার ওই কমিশন দিতে রাজি না হওয়ায় দুজন বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এতে মেডিকেল কলেজের হল থেকে শিক্ষার্থীরা এসে ওই দোকানে ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনায় ৯ জন ওষুধ ব্যবসায়ী আহত হন।
বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে আমরা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি। রাতে আমরা ওষুধ ব্যবসায়ীরা আলোচনায় বসব। এখান থেকে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'