আগামী নির্বাচনে জয় নিশ্চিতে তৃণমূল নেতাদের মাঠে থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঠে থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অভ্যন্তরীণ সব কোন্দল দ্রুত নিরসন করে যেকোনো মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দলীয় প্রধান বলেছেন, আগামী নির্বাচনে মুখ দেখে কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। দলের কেন্দ্র ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এখন জরিপ চলছে। জরিপের ফলফলে যেসব নেতারা এগিয়ে থাকবেন, তাদেরকেই নৌকার মাঝি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (৬ আগস্ট) আওয়ামী লগের বিশেষ বর্ধিত সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এসব নির্দেশনা দেন।
বিরোধী দলের যেকোনো নৈরাজ্য মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকবে বলেও তিনি বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের জানান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে, আন্দোলনের মাধ্যমে সেসব পরিস্থিতি মোকবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে গায়ে পড়ে কারো সাথে কোনোরকম ঝামেলায় জড়ানো যাবেনা বলেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার সকালে 'শত সংগ্রামে অজস্র গৌরবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে' শীর্ষক বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সকাল ৯টা থেকেই তৃণমূলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা গণভবনে প্রবেশ শুরু করেন। সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মঞ্চে আসেন। সভার শুরুতে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভাটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ।
তৃণমূলের নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, "মনোনয়ন যাকেই দেই, আমি কিন্তু ঘরে বসে থাকি না। সারাদিন কাজ করি। সংগঠনের কাজও করি। কোথায় কার কী অবস্থা সেটা কিন্তু ছয় মাস পর পর জরিপ করি। আমাদের এমপিদের কী অবস্থা, অন্য জনপ্রতিনিধিদের কী অবস্থা তার একটা হিসেব নেওয়ার চেষ্টা করি।"
"জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপরে নির্ভর করছে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়া বা না যাওয়া। সেই কথাটা মাথায় রেখে, আমাদের ওপরে ভরসা রাখতে হবে। আমরা যখন মনোনয়ন দেব অবশ্যই আমাদের একটা হিসেব থাকবে যে কাকে দিলে আমরা আসনটা ফিরে পাব," যোগ করেন তিনি।
এদিকে, সব ভেদাভেদ ও কোন্দল ভুলে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি দেন ক্ষসতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করার প্রতিশ্রুতি দেন তারা।
এছাড়া, নেতারা নির্বাচন ঘিরে দেশি ও বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র রুখতেও নিজেদের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সভায় দলটির উপদেষ্টা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, জাতীয় কমিটিসহ সারাদেশের ৭৮ টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা, থানা, পৌর, দলীয় সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশনের মেয়র, জেলা সদরের পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বর্ধিত সভায় অংশ নেন। গণভবন প্রাঙ্গনে মোট সাড়ে ৩ হাজার মানুষের বসার ব্যবস্থা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধোধনী বক্তব্যের পর তৃণমূলের নেতারা বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা নিজ নিজ সাংগঠনিক জেলার নানান সমস্যা তুলে ধরেন।
সভায় দেশের ৮টি বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি সমাপনী বক্তব্য রাখেন।
তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যের বড় অংশ জুড়েই ছিল গত সাড়ে ১৪ বছরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রশংসা।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, "পটুয়াখালী জেলার তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভাল নেই। তাদের কথা আমরা আমাদের সরকারের সুফল ঘরে তুলে নিতে পারিনি। দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই দলের দুঃস্থ ও গরীব নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর রাখে না।"
পঞ্চগড় জেলায় ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, "বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর দিয়ে চারটি দেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও ইমিগ্রেশন চালু হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ ব্যাপক উপকৃত হয়েছে।"
ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী বলেন, "খালেদা জিয়ার জন্মস্থান হওয়ায় ফেনী এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল। সাড়ে ১৪ বছরে জেলার প্রতিটি এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ফলে জেলায় ভোটের চিত্রও বদলে গেছে। ফেনী এখন আর বিএনপির ঘাঁটি নাই। ফেনী এখন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ভবিষ্যতে ফেনীতে বিএনপি আর আগের মতো জিততে পারবে না। ফেনীতে সাংগঠনিক কোনো দূর্বলতা নেই, আমরা এখন অনেক শক্তিশালী।"
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ তালুকদার প্রমুখ।
বর্ধিত সভাটি সকাল ১০টার দিকে শুরু হয়ে দুপুরে বিরতির পর সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে।
