প্রধানমন্ত্রীকে গণভবন থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

অবাধ ও সুষ্ঠু নিবার্চন নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সব ধরনের নিরাপত্তা ত্যাগ করে গণভবন থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১৯ মে) রাজধানীর আদাবরের শ্যামলী ক্লাব মাঠে এক সমাবেশে ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা উচিত এবং সংসদ ভেঙে দেওয়া উচিত; কারণ তার অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ব্যাপক লোডশেডিং এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।
ফখরুল বলেন, "আমরা সংঘাত চাইনা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিয়ন্তান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। এ কারণে আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।"
তিনি বলেন, "আমাদের প্রথম শর্ত হলো বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আপনাদের পদত্যাগ করতে হবে এবং সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে।"
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, "আপনারা নতুন আইন করতে যাচ্ছেন- নির্বাচন কমিশন কোনো আসনের নির্বাচন বাতিল করতে পারবেনা। তাহলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা থাকলো কোথায়? আপনারা জনগণকে বোকা মনে করছেন, জনগণের সাথে প্রতারণা করছেন।"
সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরকারের কোনো অন্যায় আদেশ না মানারও আহ্বান জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, "সরকারকে টেনে না নামালে তারা নামবে না, এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজপথে ফয়সালা হবে, তারপর জনগণের সংসদ গঠন হবে।"
সরকার কোণঠাসা হয়ে শেষবারের মতো টিকে থাকার চেষ্টা করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঊর্ধ্বমুখী দাম মোকাবেলায় সরকারের অক্ষমতারও সমালোচনা করেন।
সিলেটে বিএনপির সমাবেশে পুলিশের বাধা
শুক্রবার সিলেট সিটি রেজিস্ট্রি মাঠে বিএনপিকে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে বাধা দেয় পুলিশ।
রেজিস্ট্রি মাঠের গেটে পুলিশের ব্যারিকেড অবরোধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা। সমাবশস্থলে প্রবেশে বাধা দেওয়া তারা কোর্ট পয়েন্ট থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
পুলিশ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, রেজিস্ট্রি মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি নেয়নি বিএনপি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সুদীপ দাস বলেন, "বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা পুলিশের নির্দেশনা না মেনে রেজিস্ট্রি গ্রাউন্ডে জড়ো হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
খুলনায় বিএনপির সমাবেশ
এদিকে, শুক্রবার খুলনায় বিএনপির সমাবেশে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এ সময় নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারগ্যাসও ছোড়া হয়। বিএনপির দাবি, এতে অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার বিকাল ৪টায় খুলনা প্রেসক্লাবে এ ঘটনা ঘটে। সরকারের পদত্যাগ, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ, সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে প্রেস ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করে বিএনপি। সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি মিছিলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘাত শুরু হয়।
সংঘর্ষের সময় পুলিশ গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। তাদের দাবি, দিঘলিয়া সেনহাটি ইউনিয়ন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবুর রহমান, যুবদল নেতা জাহিদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন অভিযোগ করেন, "বিনা উস্কানিতে পুলিশ সমাবেশে পণ্ড করতে গুলি, টিয়ারগ্যাস ও লাঠিচার্জ করেছে।"
চট্টগ্রামে সমাবেশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র সফরকে ব্যর্থ বলে অভিহিত করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
শুক্রবার বিকেলে বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিট আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, "এই সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে, এই কথা কেউ বিশ্বাস করেনা। বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।"