তৃতীয় স্থান দখলের প্লে-অফ: কার গলায় ঝুলবে ব্রোঞ্জ মেডেল?

মেসির ফুটবল বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে সময় পার করছেন বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী। রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় লুসাইল স্টেডিয়ামে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে নামবে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স।
টানটান উত্তেজনাপূর্ণ কাতার বিশ্বকাপের এই শেষ ম্যাচে জানা হবে কার হাতে উঠবে বিজয়ের ট্রফি, আর কাকে কেবল প্রথম রানার্সআপ হয়েই বিদায় নিতে হবে মরুর দেশটি থেকে।
ফাইনাল ম্যাচকে নিয়ে আগ্রহের কারণে আপাতত চাপা পড়ে আছে তৃতীয় স্থানের জন্য মরক্কো-ক্রোয়েশিয়ার প্লে-অফ। কাতারের সবচেয়ে পুরোনো স্টেডিয়াম, খলিফা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় আজ রাত নয়টায় শুরু হয়েছে দুই দলের মধ্যকার ম্যাচ। কোন দল হতে চলেছে দ্বিতীয় রানার্সআপ অর্থাৎ তৃতীয়? কার গলায় ঝুলবে ব্রোঞ্জ মেডেল: হাকিমি না লুকা মদ্রিচদের?
বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর নকশাটা বেশ অদ্ভুত। একদিকে শিরোপা জয়ের আকাঙ্ক্ষা পদধূলিত, অন্যদিকে সেলিফাইনালের হারের তাজা ক্ষত: এই দুইয়ের সাথে মানসিকভাবে লড়তেই লড়তেই যেতে হবে আরেক লড়াইয়ে। তৃতীয় স্থানের ব্রোঞ্জ মেডেলের জন্য লড়াই। সেমিফাইনালের ভগ্ন হৃদয় এবং স্বপ্ন চূর্ণবিচূর্ণ হওয়ার সান্তনা দিতে পারবে কি?
ক্রোয়েশিয়ার প্রধান কোচ জলাতকো ডালিক বলেন, 'এমন পরাজয়ের পর খেলোয়াড়দের নিজেদের শক্ত করে রাখা কঠিন। কিন্তু এটি জয়ের সাক্ষর রেখে যাওয়ার একটু সুবর্ণ সুযোগ। মেডেল অর্জন করে নিজেদের গর্বিত করে তোলার সুযোগ।' খবর, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর।
একই সুর উচ্চারিত করেন মরক্কোর কোচও। আরেক ম্যাচ শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) আটলাসের সিংহদের প্রধান কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুই বলেন, 'আমি মনে করি, আমাদের জন্য এটিই হবে সবচেয়ে বাজে ম্যাচ। তবুও আমরা খেলতে আগ্রহী।'
সেমিফাইনাল টপকাতে না পারার হতাশাকে সাথে নিয়েই ব্রোঞ্জের জন্য খেলতে নামার বেদনা ফুটে ওঠে তার কথায়। 'আসল ফাইনালে খেলতে পারলে আমাদের অবশ্যই ভালো লাগত, কিন্তু আমরা খেলছি তৃতীয় স্থানের জন্য,' বলেন তিনি।
কেবল মরক্কো কিংবা ক্রোয়েশিয়া নয়, ব্রোঞ্জ লড়াইয়ের এই ম্যাচ বোধহয় ঐতিহাসিকভাবে ঘৃণিত।
১৯৯০ সালে ইতালির কোচ আযেগলো ভিনিসি এই ম্যাচ সম্পর্কে বলেছিলেন, 'এটি খেলোয়াড়, দর্শক এবং ফুটবলের আত্মার জন্য শাস্তি।'
অন্যদিকে, এই ম্যাচ খেলাই উচিত নয় বলে মনে করেন ডাচদের কোচ লুই ফন গাল।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে প্লে-অফ ম্যাচের আগে এর প্রাসঙ্গিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ফন গাল। তিনি বলেন, 'আমি এই একই কথা ১০ বছর ধরে বলছি। পরাজয়ের পর এত কম সময়ের মধ্যে এই ম্যাচ খেলতে হয়। এটি মোটেই ন্যায়সম্মত নয়। আমার মতে সচেয়ে জঘন্য ব্যাপারটা হলো, ভালো খেলেও একই টুর্নামেন্টে পরপর দু'বার হারার আশঙ্কা তৈরি হয়ে যায়। প্লে-অফে হেরে গেলে দুই দুইটা পরাজয় নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।'
এত সমালোচনার সত্ত্বেও ফিফা এই ম্যাচকে পুনর্বিবেচনা করেনি। কারণ প্লে-অফ ম্যাচ অর্থবহ, এর গুরুত্ব এবং ঐতিহাসিক মূল্যও রয়েছে।
তাই ম্যাচটির প্রতি ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের মনোভাব ইতিবাচক। তিনি বলেন, 'সেমি-ফাইনালে হারার দুই দিন পরেই খেলতে হওয়ায়, এটিকে সবচেয়ে নির্মম ম্যাচ মনে হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে জিতে দেশে ফেরার পর নিজের প্রচেষ্টাকে তুলে ধরার জন্য অন্তত একটি মেডেল থাকে।'
এবারের ম্যাচটি হতে পারে ৩৭ বছর বয়সী লুকা মদ্রিচের বিদায়ী ম্যাচ। ডেজান লভরেন এবং মাতেও কোভাচিচের জন্যেও এটি হতে পারে শেষ ম্যাচ।
হয়তো ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার মদ্রিচের খেলা দেখে আবেগাপ্লুত হবেন ক্রোয়েশিয়ার দর্শকরা। অন্যদিকে এই ম্যাচে জিতলে আরেক ইতিহাস সৃষ্টি করবেন হাকিমিরা। তাই তাদের জন্য পূর্ণ সমর্থন নিয়ে স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছেয়ে যাবে লাল রঙে।