নতুন রিজার্ভ মুদ্রা দিয়ে ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চায় রাশিয়া-চীন

চীনসহ ব্রিকস সদস্য অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে বৈশ্বিক মুদ্রা রিজার্ভ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হবে এমন একটি মুদ্রা চালু করতে চায় রাশিয়া। এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্যই রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের আধিপত্যের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া।
বিশ্বের পাঁচ বৃহৎ উদীয়মান অর্থনীতি- ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা মিলে গঠিত ব্রিকস। এই পাঁচ দেশের কোনো একটি মুদ্রাকেই রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে বেঁছে নেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
গত বুধবার ব্রিকস বিজনেস ফোরামে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, "আমাদের সদস্য দেশগুলির মুদ্রা ঝুড়িকে আমরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা রিজার্ভ মাধ্যম হিসেবে তৈরির চিন্তা-ভাবনা করছি। এজন্য আমরা সব ন্যায্য অংশীদারদের সাথে প্রকাশ্যে কাজ করব"- পুতিনের বক্তব্যকে এভাবেই রুশ বার্তাসংস্থা তাস এজেন্সি তুলে ধরেছে।
দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে প্রাধান্য পেয়ে আসছে মার্কিন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা রিজার্ভে ধীর গতিতে হলেও ডলারের প্রধান হিস্যা থাকার সে আধিপত্য কমছে। চীনের ইউয়ানসহ অপেক্ষাকৃত কম প্রচলিত সুইডিশ ক্রোনা ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওন- কে যুক্ত করে ফরেক্স রিজার্ভকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করতে সচেষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানাচ্ছে এমন তথ্য।
বৈশ্বিক আর্থিক সংস্থা আইএনজি'র বৈশ্বিক বাজার প্রধান ক্রিস টার্নার এক নোটে লিখেছেন, "আইএমএফে যুক্তরাষ্ট্রের যে আধিপত্য রয়েছে তা অবসানেই (চীন-রাশিয়ার) এ উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ব্রিকস জোট তাদের নিজস্ব প্রভাব বলয় বিস্তার করবে এবং সেখানে তাদের নির্বাচিত মুদ্রাকে রিজার্ভের প্রধান তারল্য হিসেবে যেন রাখা হয় সে চেষ্টা করবে।"
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করায় রাশিয়ার ওপর ইতিহাসের নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমারা। এতে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশটি এবং ডলারে লেনদেনের উৎস সংকুচিত হয়ে পড়ায় চাপে রয়েছে রুশ অর্থনীতি। এমন অবস্থায় নতুন বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা তৈরির চেষ্টায় যোগ দিল মস্কো।
ক্রিস টার্নার বলেন, "যে দ্রুততার সাথে পশ্চিমা সরকারগুলো ও তাদের মিত্ররা রাশিয়ার ফরেক্স রিজার্ভের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে—নিঃসন্দেহে তাতে সংশ্লিষ্ট রুশ কর্তৃপক্ষও বিস্মিত হয়েছিলেন।"
"রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যত সে বিস্ময়ের স্বীকারোক্তি দিয়েছে। চীনের মতো কিছু ব্রিকস দেশ নিষেধাজ্ঞার গতি দেখে শঙ্কিত হয়। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় যতটা সঙ্গোপনে নিষেধাজ্ঞার আদ্যপান্ত তৈরি করে রেখেছিল- সেটাও তাদের হতবিহ্বল করেছে"- যোগ করেন তিনি।
টার্নারের মতে, এসব নিষেধাজ্ঞা মস্কো ও বেইজিংকে একযোগে আইএমএফ এর আন্তর্জাতিক রিজার্ভ সম্পদ- স্পেশাল ড্রয়িং রাইটসের (এসডিআর) বিকল্প তৈরিতে উৎসাহিত করেছে।
এসডিআর কোনো রিজার্ভ মুদ্রা নয়। তবে এই তহবিলের বেশিরভাগ মার্কিন ডলার, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েন ও চীনের ইউয়ানে সংরক্ষণ করা হয়। ডলারের পরিমাণই এতে বেশি।
এক্ষেত্রে ব্রিকস নিজেদের সকল মুদ্রাকে বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে। এতে শুধু ব্রিকস সদস্য দেশ নয় বরং ইতোমধ্যেই তাদের প্রভাবের আওতাভুক্ত অন্যান্য দেশও আকৃষ্ট হবে। বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির রিজার্ভে ব্রিকস মুদ্রা গৃহীত হবে বলে ধারণা করা হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের ৭০ শতাংশ অবনমন হয়। তবে এরপর রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমর্থনে রুবল যুদ্ধের আগের সময়ের চেয়েও শক্তিশালী মান অর্জন করেছে। চলতি জুনে মুদ্রাটির মান বেড়েছে আরও ১৫.২ শতাংশ।
- সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার