এবার আগে লোডশেডিং ঢাকায় হবে, এরপর গ্রামে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা

গ্রীষ্মে লোডশেডিং কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সরকার। তবে তীব্র তাপপ্রবাহে চাহিদা বাড়লে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সম্মেলন কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, 'আগের মতো শুধু গ্রামে লোডশেডিং হবে না। উৎপাদন কম হলে তাহলে প্রথমে ঢাকায় বিদ্যুৎ যাবে, তারপর দেশের অন্য জায়গায়।'
দুই ধরনের কারণে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'উৎপাদন কম হলে যদি লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন সেটি লোডশেডিং। আর ঝড়-বৃষ্টিসহ কোনো কারণে যদি ফিউজ চলে যায়, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সেটি বিদ্যুৎ বিভ্রাট।'
তিনি বলেন, 'রমজানের মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়তো সম্ভব হবে না, তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রিতে রাখলে এক-দুই হাজার মেগাওয়াট লোড কমানো সম্ভব। এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।'
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি জানান, ছয় লেন প্রকল্প সময়সাপেক্ষ বিধায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে সড়কে সিএনজি চলাচল বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হবে এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হবে।
সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আতাউর রহমান জানান, মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। সেপ্টেম্বরে তা শেষ হওয়ার পর ডিসেম্বরে ডিপিপি চূড়ান্ত হবে। জানুয়ারিতে জাইকার সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।
নগরীর জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, 'বৃষ্টির পরিমাণের ওপর জলাবদ্ধতা নির্ভরশীল। তবে এবার দুর্ভোগ অনেকটা কমবে।'
তিনি জানান, 'খাল পরিষ্কারের পরও সেখানে আবার ময়লা ফেলা হচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে, জনগণকে আমরা সম্পৃক্ত করতে পারিনি। এজন্য বিভাগীয় কমিশনারকে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময়ের নির্দেশ দিয়েছি। ২০ হাজার ময়লা রাখার বিন দেওয়া হবে। এরপরও কেউ নিয়ম না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হবে।'
রেল খাতে অপচয় রোধে উপদেষ্টা বলেন, 'রেলের প্রতি এক টাকা আয়ের বিপরীতে আড়াই টাকা ব্যয় হয়। আমি বলেছি, এ বছর তা দুই টাকায় নামাতে হবে।'
তিনি জানান, রেলের ওয়ার্কশপে লোকোমোটিভ এসেম্বল করতে রেল সচিবকে ডিপিপি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রেলের বিভিন্ন কাজে অন্য সংস্থার বাধা বিষয়ে তিনি বলেন, 'সিটি করপোরেশন রাস্তা করতে চাইলেও, ওয়াসা পানি দিতে চাইলেও রেল অনুমতি দেয় না। এটা বন্ধ করতে হবে। রেলের কাজ ট্রেন চালানো, রাস্তা বা পানি সরবরাহ নয়। এগুলো করতে গিয়ে রেলের দক্ষতা নষ্ট হয়, অপচয় হয়।'
রেলের হাসপাতালগুলো রেল পরিবারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্যও খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে উপদেষ্টা জানান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে—সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হবে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
সভায় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম, রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম, রেল মহাপরিচালক আফজাল হোসেন, বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়াউদ্দিন, ওয়াসা এমডি আনোয়ার পাশা, ডিসি ফরিদা খানমসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।