ধূমপান বা মদপানের চেয়েও ভয়ংকর বায়ুদূষণ, কেড়ে নিচ্ছে জীবন থেকে দুই বছর

বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল থেকে দুই বছর দুই মাস কমে যাচ্ছে বলে নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে। মঙ্গলবার (১৪ জুন) এক রিপোর্টে এ তথ্য জানিয়েছে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট (ইপিআইসি)।
এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স (একিউএলআই) শীর্ষক ওই গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, বায়ু দূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবন থেকে সামগ্রিকভাবে ১৭০০ কোটি বছর হারিয়ে যাচ্ছে। আর বায়ু দূষণ কমানো গেলে বৈশ্বিক প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল ৭২ থেকে ৭৪.২ বছরে বৃদ্ধি পাবে।
ওই রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, ধূমপান করলে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল থেকে গড়ে ১.৯ বছর কমে যায়। মদ ও অন্যান্য নেশার কারণে আয়ুষ্কাল কমে গড়ে নয় মাস, অনিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের কারণে কমে গড়ে সাত মাস, এইচআইভি ও এইডস-এর কারণে কমে গড়ে চার মাস। এছাড়া ম্যালেরিয়ার কারণে গড়ে তিন মাস, এবং যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদের কারণে গড়ে সাত দিন প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল কমে যায়।
একিউএলআই-এর এ রিপোর্টটি উল্লেখযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ এ গবেষণায় সংশ্লেষের (correlation) পাশাপাশি কার্যকারণও (causation) ব্যবহার করে হিসাবটি করা হয়েছে। এর ফলে দুইটি ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় সহজ হয়েছে।
ওই গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, বায়ুদূষণ মারাত্মক কারণ যারা দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে বাস করেন, তাদের পক্ষে সে স্থান ত্যাগ করা সম্ভব হয় না। 'ধূমপান ছাড়া যায়, রোগ বালাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, কিন্তু বায়ু দূষিত হলে সেখানে নিঃশ্বাস বন্ধ করে থাকার কোনো উপায় নেই। তাই অন্য যেকোনো সমস্যার চেয়ে বায়ুদূষণ বেশি মানুষকে আক্রমণ করে,' একিউএলআই-এর রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়।
বায়ুদূষণের ৬০ শতাংশ হয়ে থাকে জীবাশ্ম জ্বালানির দহনের পর বাতাসে ভেসে থাকা এর উপাদান থেকে। ১৮ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়ে থাকে ধুলোবালি, সামুদ্রিক লবণকণা, দাবানল ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে। আর বাকি ২২ শতাংশ দূষণ হয় মানুষের অন্যান্য কর্মকাণ্ড থেকে।
এ রিপোর্টটি ২০২০ সালের বায়ুদূষণের উপাত্ত থেকে করা হয়েছে। ওই সময় করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীর অনেক কাজ স্থবির ছিল, তেমন একটা যানবাহনও চলাচল করেনি। তবে তা-তে বায়ুদূষণের পরিমাণ খুব একটা কমেনি। ২০১৯ সালে যেখানে বায়ুতে প্রতি ঘনমিটারে দূষিতকণা ২৭.৭ মাইক্রোগ্রাম ছিল, ২০২০ সালে তা কমে কেবল ২৭.৫ মাইক্রোগ্রাম হয়।
দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে তীব্র। এ অঞ্চলে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বায়ুদূষণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ও নেপাল।
কঠিন ও তরল পদার্থের ক্ষুদ্র কণার মিশ্রণের (পার্টিকুলেট ম্যাটার- পিএম) ফলে বায়ু দূষিত হয়। কণা যত ছোট হয়, এটি দেহের তত গভীরে প্রবেশ করতে পারে। ১০ মাইক্রোমিটারের কম ব্যাসের পিএম নাকের ভেতরে থাকা লোম ভেদ করে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে ফুসফুস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
এর চেয়ে আরও ছোট আকারের কণাগুলো ফুসফুস থেকে রক্তেও প্রবেশ করতে পারে। এতে করে রক্তপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে, যার কারণে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এয়ার কোয়ালিটি গাইডেন্স প্রকাশ করে। সেখানে বায়ুতে দূষিত পদার্থের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রামের কম। তবে সেপ্টেম্বর মাসে এ মাত্রা পাঁচ মাইক্রোগ্রামের নিচে কমিয়ে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গবেষণাটির অন্যতম গবেষক শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল গ্রিনস্টোন বলেন, 'আমরা এখনো পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ দেখি। বায়ুদূষণ একটি চ্যালেঞ্জ, কিন্তু এ চ্যালেঞ্জে জয়লাভ সম্ভব। তার জন্য কেবল প্রয়োজন কার্যকর নীতিমালা।'
সূত্র: সিএনবিসি