যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে টিকটকের মালিকানা ছাড়ছে বাইটড্যান্স, চুক্তি সই
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে শেষ পর্যন্ত মালিকানা হস্তান্তরের পথেই হাঁটল চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্স। প্রতিষ্ঠানটি তাদের মার্কিন অংশের অধিকাংশ মালিকানা ছেড়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি সই করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার কর্মীদের কাছে পাঠানো এক মেমোতে টিকটকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাও জি চিউ এ তথ্য জানান।
মেমোতে বলা হয়েছে, নতুন এই যৌথ উদ্যোগে ওরাকল, সিলভার লেক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক বিনিয়োগ সংস্থা এমজিএক্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো অংশীদার হিসেবে থাকবে। আগামী ২২ জানুয়ারি এই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে বাইটড্যান্সকে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম বিক্রি করে দেওয়ার জন্য ওয়াশিংটন যে চাপ দিয়ে আসছিল, তার অবসান হতে যাচ্ছে।
নতুন চুক্তি অনুযায়ী, বাইটড্যান্স টিকটকের মার্কিন ব্যবসার মাত্র ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ নিজেদের হাতে রাখবে। অন্যদিকে ওরাকল, সিলভার লেক এবং আবুধাবিভিত্তিক এমজিএক্স—প্রত্যেকে ১৫ শতাংশ করে মালিকানা পাবে। বাকি ৩০ দশমিক ১ শতাংশ মালিকানা থাকবে বাইটড্যান্সের বর্তমান বিনিয়োগকারীদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে।
টিকটকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই চুক্তির ফলে ১৭ কোটির বেশি মার্কিন ব্যবহারকারী কোনো বাধা ছাড়াই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন। এর আগে হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, চুক্তির অংশ হিসেবে ওরাকল টিকটকের 'রেকমেন্ডেশন অ্যালগরিদম'-এর লাইসেন্স পাবে।
২০২৪ সালের এপ্রিলে জো বাইডেন প্রশাসনের সময় মার্কিন কংগ্রেস টিকটক নিষিদ্ধে একটি আইন পাস করে। সেখানে শর্ত ছিল, মালিকানা হস্তান্তর না করলে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে অ্যাপটি নিষিদ্ধ হবে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সেই সময়সীমা কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং তিনি এই চুক্তিতে সায় দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) প্রভাষক আলভিন গ্রেলিন এ বিষয়ে বলেন, 'টিকটক যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের বৃহত্তর ক্ষেত্রে একটি দর-কষাকষির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল। বেইজিংয়ের এই সম্মতি এখন আর নতি স্বীকার মনে হচ্ছে না, বরং মনে হচ্ছে দুই পক্ষই উত্তেজনা কমানোর কৌশলী অবস্থান নিয়েছে।'
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বাইরের হস্তক্ষেপ বা প্রভাব ঠেকাতে টিকটকের 'রেকমেন্ডেশন অ্যালগরিদম' আমেরিকান ব্যবহারকারীদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নতুন করে সাজানো হবে। তবে সিনেটর ওয়াইডেন সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, 'টিকটকের অ্যালগরিদম আদৌ নিরাপদ হাতে যাচ্ছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।'
